পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূরবী
৫৮৯

এলো চুলে ব’হে এনেছ কী মোহে সেদিনের পরিমল?
বকুলগন্ধে আনে বসন্ত কবেকার সম্বল?
চৈত্র-হাওয়ায় উতলা কুঞ্জ-মাঝে
চারু চরণের ছায়ামঞ্জীর বাজে—
সে দিনের তুমি এলে এ দিনের সাজে ওগো চিরচঞ্চল।
অঞ্চল হতে ঝরে বায়ুস্রোতে সে দিনের পরিমল।

মনে আছে সে কি সব কাজ সখী, ভুলায়েছ বারে বারে?
বন্ধ দুয়ার খুলেছ আমার কঙ্কণঝংকারে।
ইশারা তোমার বাতাসে বাতাসে ভেসে
ঘুরে ঘুরে যেত মোর বাতায়নে এসে
কখনো আমের নবমুকুলের বেশে, কভু নবমেঘভারে।
চকিতে চকিতে চল-চাহনিতে ভুলায়েছ বারে বারে।

নদীকূলে-কূলে কল্লোল তুলে গিয়েছিলে ডেকে ডেকে।
বনপথে আসি করিতে উদাসি কেতকীর রেণু মেখে।
বর্ষাশেষের গগনকোনায়-কোনায়,
সন্ধ্যামেঘের পুঞ্জ সোনায় সোনায়
নির্জন খনে কখন অন্যমনায় ছুঁয়ে গেছ থেকে থেকে।
কখনে। হাসিতে কখনো বাঁশিতে গিয়েছিলে ডেকে ডেকে।

কী লক্ষ্য নিয়ে এসেছ এ বেলা কাজের কক্ষকোণে?
সাথি খুঁজিতে কি ফিরিছ একেলা তব খেলা প্রাঙ্গণে?
নিয়ে যাবে মোরে নীলাম্বরের তলে
ঘরছাড়া যত দিশাহারাদের দলে—
অযাত্রাপথে যাত্রী যাহারা চলে নিষ্ফল আয়োজনে?
কাজ ভোলাবারে ফের বারে বারে কাজের কক্ষকোণে।