পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১৬
বনবাণী

আসন্ন মিলনাশ্বাসে বধূর কম্পিত তনুখানি
নীলাম্বর-অঞ্চলের গুণ্ঠনে সঞ্চিত করে বাণী।
মর্মের নির্বাক কথা পায় তার নিঃসীমতা
নিবিড় নির্মল নীলে— আনন্দের সেই নীলদ্যুতি
নীলমণিমঞ্জরির পুঞ্জে পুঞ্জে প্রকাশে আকৃতি।

অজানা পান্থের মতো ডাক দিলে অতিথির ডাকে,
অপরূপ পুষ্পোচ্ছ্বাসে হে লতা, চিনালে আপনাকে।
বেল জুঁই শেফালিরে জানি আমি ফিরে ফিরে—
কত ফাল্গুনের কত শ্রাবণের আশ্বিনের ভাষা
তারা তো এনেছে চিত্তে, রঙিন করেছে ভালোবাসা।

চাঁপার কাঞ্চন-আভা সে যে কার কণ্ঠস্বরে সাধা,
নাগকেশরের গন্ধ সে যে কোন্ বেণীবন্ধে বাঁধা!
বাদলের চামেলি যে কালো-আঁখি-জলে ভিজে,
করবীর রাঙা রঙ কঙ্কণঝংকারসুরে মাখা—
কদম্বকেশরগুলি নিদ্রাহীন বেদনায় আঁকা।

তুমি সুদূরের দূতী নূতন এসেছ নীলমণি,
স্বচ্ছ নীলাম্বরসম নির্মল তোমার কণ্ঠধ্বনি।
যেন ইতিহাসজালে বাঁধা নহ দেশে কালে,
যেন তুমি দৈববাণী বিচিত্র বিশ্বের মাঝখানে—
পরিচয়হীন তব আবির্ভাব, কেন এ কে জানে।

‘কেন এ কে জানে’ এই মন্ত্র আজি মোর মনে জাগে;
তাই তো ছন্দের মালা গাঁথি অকারণ অনুরাগে।
বসন্তের নানা ফুলে গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলে,
আম্রবনে ছায়া কাঁপে মৌমাছির গুঞ্জরণগানে;
মেলে অপরূপ ডানা প্রজাপতি, কেন এ কে জানে।