পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১৮
বনবাণী

কাঁদিয়া কয় কাননভূমি,
‘কী আছে মোর, কী চাহ তুমি?
শুষ্ক শাখা যাও যে চুমি, কাঁপাও থরথর—
জীর্ণ পাতা বিদায়গাথা গাহিছে মরমর।’

বুঝেছি তব এ অভিনব ছলনাভরা খেলা,
তুলিছ ধ্বনি কী আগমনী আজি যাবার বেলা!
যৌবনেরে তুষারডোরে
রাখিয়াছিলে অসাড় ক’রে;
বাহির হতে বাঁধিলে ওরে কুয়াশাঘন জালে—
ভিতরে ওর ভাঙালে ঘোর নাচের তালে তালে।

নৃত্যলীলা জড়ের শিলা করুক খান্-খান্,
মৃত্যু হতে অবাধ স্রোতে বহিয়া যাক প্রাণ।
নৃত্য তব ছন্দে তারি
নিত্য ঢালে অমৃতবারি;
শঙ্খ কহে হুহুংকারি, বাঁধন সে তো মায়া—
যা-কিছু ভয়, যা-কিছু ক্ষয়, সে তো ছায়ার ছায়া।

এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরি জয়—
যুগের পরে যুগান্তরে মরণ করে লয়।
তাণ্ডবের ঘূর্ণিঝড়ে
শীর্ণ যাহা ঝরিয়া পড়ে,
প্রাণের জয়তোরণ গড়ে আনন্দের তানে—
বসন্তের যাত্রা চলে অনন্তের পানে।

বাঁধনে যারে বাঁধিতে নারে বন্দী করি তারে
তোমার হাসি সমুচ্ছ্বাসি উঠিছে বারে বারে।
অমর আলো হারাবে না যে,
পালিছ তারে আঁধার-মাঝে—