পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহুয়া
৬৩৩

তোমারে পরালো সাজ মিলি সখীদল
গোপনে মুছিয়া চক্ষুজল।

মৃদুস্রোত নদীখানি ক্ষীণ কলকলে
স্তিমিত বাতাসে যেন বলে—
‘কত বধূ গিয়েছিল কতকাল এই স্রোত বাহি
তীর-পানে চাহি।
ভাগ্যের বিধাতা কোনো কহেন নি কথা,
নিস্তব্ধ ছিলেন চেয়ে লজ্জাভয়ে-নতা
তরুণী কন্যার পানে, তরী-’পরে ছিলেন গোপনে
তরণীর কাণ্ডারীর সনে।’

কোন্ টানে জানা হতে অজানায় চলে
আধো-হাসি আধো-অশ্রুজলে।
ঘর ছেড়ে দিয়ে তবে ঘরখানি পেতে হয় তারে
অচেনার ধারে।
ও পারের গ্রাম দেখো আছে ওই চেয়ে,
বেলা ফুরাবার আগে চলো তরী বেয়ে—
ওই ঘাটে কত বধূ কত শত বর্ষ বর্ষ ধরি
ভিড়ায়েছে ভাগ্যভীরু তরী।

জনে জনে রচি গেল কালের কাহিনী—
অনিত্যের নিত্য প্রবাহিণী;
জীবনের ইতিবৃত্তে নামহীন কর্ম-উপহার
রেখে গেল তার।
আপনার প্রাণসূত্রে যুগ যুগান্তর
গেঁথে গেঁথে চলে গেল না রাখি স্বাক্ষর,
ব্যথা যদি পেয়ে থাকে না রহিল কোনো তার ক্ষত,
লভিল মৃত্যুর সদাব্রত।