পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহুয়া
৬৩৫

যাহা সবচেয়ে সত্য সবচেয়ে খেলা যেন তাই,
যেন সে ফাল্গুন-কলোল্লাস।
যেন তাহা নিঃসংশয়, মর্তের ম্লানতা যেন নাই,
দেবতার যেন সে উচ্ছ্বাস।
সহজে মিশেছে তাই আত্মভোলা মানুষের সনে
আকাশের আলো আজি গোধূলির রক্তিম লগনে—
বিশ্বের রহস্যলীলা মানুষের উৎসবপ্রাঙ্গণে
লভিয়াছে আপন প্রকাশ।

বাজা তোরা বাজা বাঁশি, মৃদঙ্গ উঠুক তালে মেতে
দুরন্ত নাচের নেশা-পাওয়া।
নদীপ্রান্তে তরুগুলি ওই দেখ্ আছে কান পেতে,
ওই সূর্য চাহে শেষ চাওয়া।
নিবি তোরা তীর্থবারি সে অনাদি উৎসের প্রবাহে
অনন্তকালের বক্ষ নিমগ্ন করিতে যাহা চাহে
বর্ণে গন্ধে রূপে রসে, তরঙ্গিত সংগীত-উৎসাহে
জাগায় প্রাণের মত্ত হাওয়া।

সহস্র দিনের মাঝে আজিকার এই দিনখানি
হয়েছে স্বতন্ত্র চিরন্তন।
তুচ্ছতার বেড়া হতে মুক্তি তারে কে দিয়েছে আনি,
প্রত্যহের ছিঁড়েছে বন্ধন।
প্রাণদেবতার হাতে জয়টিকা পরেছে সে ভালে,
সূর্যতারকার সাথে স্থান সে পেয়েছে সমকালে—
সৃষ্টির প্রথম বাণী যে প্রত্যাশা আকাশে জাগালে
তাই এল করিয়া বহন।

 ২০ আশ্বিন ১৩৩৫