পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩৮
পরিশেষ

ফেলে গেছে শেষ দীর্ঘশ্বাস। ধরণীর অন্তঃপুরে
রবিরশ্মি নামে যবে, তৃণে তৃণে অঙ্কুরে অঙ্কুরে
যে নিঃশব্দ হুলুধ্বনি দূরে দূরে যায় বিস্তারিয়া
ধূসর যবনি-অন্তরালে, তারে দিনু উৎসারিয়া
এ বাঁশির রন্ধ্রে রন্ধ্রে; যে বিরাট গূঢ় অনুভবে
রজনীর অঙ্গুলিতে অক্ষমালা ফিরিছে নীরবে
আলোকবন্দনামন্ত্র-জপে— আমার বাঁশিরে রাখি
আপন বক্ষের ’পরে, তারে আমি পেয়েছি একাকী
হৃদয়কম্পনে মম; যে বন্দী গোপন গন্ধখানি
কিশোর কোরক-মাঝে স্বপ্নস্বর্গে ফিরিছে সন্ধানি
পূজার নৈবেদ্যডালি, সংশয়িত তাহার বেদনা
সংগ্রহ করেছে গানে আমার বাঁশরি কলস্বনা।
চেতনাসিন্ধুর ক্ষুব্ধ তরঙ্গের মৃদঙ্গগর্জনে
নটরাজ করে নৃত্য, উন্মুখর অট্টহাস্য-সনে
অতল অশ্রুর লীলা মিলে গিয়ে কলরলরোলে
উঠিতেছে রনি রনি— ছায়া রৌদ্র সে দোলায় দোলে
অশ্রান্ত উল্লোলে। আমি, তীরে বসি তারি রুদ্রতালে
গান বেঁধে লভিয়াছি আপন ছন্দের অন্তরালে
অনন্তের আনন্দবেদনা। নিখিলের অনুভূতি
সংগীতসাধনা-মাঝে রচিয়াছে অসংখ্য আকূতি।
এই গীতিপথপ্রান্তে হে মানব, তোমার মন্দিরে
দিনান্তে এসেছি আমি নিশীথের নৈঃশব্দ্যের তীরে
আরতির সান্ধ্য ক্ষণে; একের চরণে রাখিলাম
বিচিত্রের নর্মবাঁশি— এই মোর রহিল প্রণাম।

শান্তিনিকেতন
৬ এপ্রিল ১৯৩১