পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫৮
পুনশ্চ

ভাগ্যটা ঘোলা জলের ডোবা—
বীরত্বের স্মৃতি মনের মধ্যে কেবলই আজ আওয়াজ করছে
ঠাট্টার মতো।
ঠিক করলুম ভুল শোধরাতে হবে।

খবর পেয়েছি, গরমের ছুটিতে ওরা যায় দার্জিলিঙে।
সেবার আমারও হাওয়া বদলাবার জরুরি দরকার।
ওদের ছোট্ট বাসা, নাম দিয়েছে মতিয়া—
রাস্তা থেকে একটু নেমে এক কোণে,
গাছের আড়ালে,
সামনে বরফের পাহাড়।
শোনা গেল, আসবে না এবার।
ফিরব মনে করছি এমন সময়ে আমার এক ভক্তের সঙ্গে দেখা—
মোহনলাল—
রোগা মানুষটি, লম্বা, চোখে চশমা—
দুর্বল পাকযন্ত্র দার্জিলিঙের হাওয়ায় একটু উৎসাহ পায়।
সে বললে, ‘তনুকা আমার বোন,
কিছুতে ছাড়বে না তোমার সঙ্গে দেখা না করে।’
মেয়েটি ছায়ার মতো,
দেহ যতটুকু না হলে নয় ততটুকু—
যতটা পড়াশোনায় ঝোঁক, আহারে ততটা নয়।
ফুটবলের সর্দারের ’পরে তাই এত অদ্ভুত ভক্তি—
মনে করলে, আলাপ করতে এসেছি সে আমার দুর্লভ দয়া।
হায় রে ভাগ্যের খেলা।

যেদিন নেমে আসব তার দুদিন আগে তনুকা বললে,
‘একটি জিনিস দেব আপনাকে যাতে মনে থাকবে আমাদের কথা—
একটি ফুলের গাছ।’
এ এক উৎপাত। চুপ করে রইলেম।