পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮৬
শেষ সপ্তক

কুকুর ডেকে উঠল অকারণে।
নটার ঘণ্টা বাজল দেউড়িতে।
অবাক হয়ে শুনছি রোঘোর চরিতকথা।

তত্ত্বরত্নের ছেলের পৈতে,
রোঘো ব’লে পাঠালো চরের মুখে—
‘নমো নমো করে সারলে চলবে না ঠাকুর,
ভেবো না খরচের কথা।’
মোড়লের কাছে পত্র দেয়
পাঁচ হাজার টাকা দাবি ক’রে ব্রাহ্মণের জন্যে।

রাজার খাজনা বাকির দায়ে
বিধবার বাড়ি যায় বিকিয়ে,
হঠাৎ দেওয়ানজির ঘরে হানা দিয়ে
দেনা শোধ করে দেয় রঘু।
বলে, ‘অনেক গরিবকে দিয়েছ ফাঁকি,
কিছু হাল্কা হোক তার বোঝা।’

একদিন তখন মাঝ-রাত্তির—
ফিরছে রোঘো লুটের মাল নিয়ে,
নদীতে তার ছিপের নৌকো
অন্ধকারে বটের ছায়ায়।
পথের মধ্যে শোনে,
পাড়ায় বিয়েবাড়িতে কান্নার ধ্বনি।
বর ফিরে চলেছে বচসা করে;
কনের বাপ পা আঁকড়ে ধরেছে বরকর্তার।
এমন সময় পথের ধারে
ঘন বাঁশবনের ভিতর থেকে
হাঁক উঠল, রে রে রে রে রে রে।