১১
কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা,
তারি মধ্যে চিরজীবন বইব গানের ডালা—
এই কি তোমার খুশি, আমায় তাই পরালে মালা
সুরের-গন্ধ-ঢালা?
তাই কি আমার ঘুম ছুটেছে, বাঁধ টুটেছে মনে,
খেপা হাওয়ার ঢেউ উঠেছে চিরব্যথার বনে,
কাঁপে আমার দিবানিশার সকল আঁধার-আলা?
এই কি তোমার খুশি, আমায় তাই পরালে মালা সুরের-গন্ধ-ঢালা?
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা, দিনের কাজে ত্রুটি,
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি।
শান্তি কোথায় মোর তরে হায় বিশ্বভুবন-মাঝে,
অশান্তি যে আঘাত করে তাই তো বীণা বাজে।
নিত্য রবে প্রাণ-পোড়ানো গানের আগুন জ্বালা—
এই কি তোমার খুশি, আমায় তাই পরালে মালা সুরের-গন্ধ-ঢালা?
১২
মধুর, তোমার শেষ যে না পাই, প্রহর হল শেষ—
ভুবন জুড়ে রইল লেগে আনন্দ-আবেশ।
দিনান্তের এই এক কোণাতে সন্ধ্যামেঘের শেষ সোনাতে
মন যে আমার গুঞ্জরিছে কোথায় নিরুদ্দেশ।
সায়ন্তনের ক্লান্ত ফুলের গন্ধ হাওয়ার ’পরে
অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে সকল অঙ্গ ভরে।
এই গোধূলির ধূসরিমায় শ্যামল ধরার সীমায় সীমায়
শুনি বনে বনান্তরে অসীম গানের রেশ।
২১ সেপ্টেম্বর ১৯২৬