পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রান্তিক
৭৭৩

যাবার সময় হল বিহঙ্গের

যাবার সময় হল বিহঙ্গের। এখনি কুলায়
রিক্ত হবে; স্তব্ধগীতি ভ্রষ্ট নীড় পড়িবে ধুলায়
অরণ্যের আন্দোলনে। শুষ্কপত্র জীর্ণপুষ্প সাথে
পথচিহ্নহীন শূন্যে যাব উড়ে রজনীপ্রভাতে
অস্তসিন্ধু-পরপারে। কতকাল এই বসুন্ধরা
আতিথ্য দিয়েছে; কভু আম্রমুকুলের গন্ধে-ভরা
পেয়েছি আহ্বানবাণী ফাল্গুনের দাক্ষিণ্যে মধুর;
অশোকের মঞ্জরি সে ইঙ্গিতে চেয়েছে মোর সুর,
দিয়েছি তা প্রীতিরসে ভরি; কখনো বা ঝঞ্ঝাঘাতে
বৈশাখের, কণ্ঠ মোর রুধিয়াছে উত্তপ্ত ধুলাতে,
পক্ষ মোর করেছে অক্ষম; সব নিয়ে ধন্য আমি
প্রাণের সম্মানে। এ পারের ক্লান্ত যাত্রা গেলে থামি
ক্ষণতরে পশ্চাতে ফিরিয়া মোর নম্র নমস্কারে
বন্দনা করিয়া যাব এ জন্মের অধিদেবতারে।

শান্তিনিকেতন
১৫ বৈশাখ ১৩৪১


অবরুদ্ধ ছিল বায়ু

অবরুদ্ধ ছিল বায়ু; দৈত্যসম পুঞ্জমেঘভার
ছায়ার প্রহরীব্যূহে ঘিরে ছিল সূর্যের দুয়ার;
অভিভূত আলোকের মূর্ছাতুর ম্লান অসম্মানে
দিগন্ত আছিল বাষ্পাকুল। যেন চেয়ে ভূমি-পানে
অবসাদে-অবনত ক্ষীণশ্বাস চিরপ্রাচীনতা
স্তব্ধ হয়ে আছে বসে দীর্ঘকাল, ভুলে গেছে কথা,
ক্লান্তিভারে আঁখিপাতা বদ্ধপ্রায়।

শূন্যে হেনকালে