পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সেঁজুতি
৭৭৯

ট্যাক্সি এল দ্বারে, দিল সাড়া
হুংকারপরুষরবে। নিদ্রায়-গম্ভীর পাড়া
রহে উদাসীন।
প্রহরীশালায় দূরে বাজে সাড়ে তিন।

শূন্য-পানে চক্ষু মেলি
দীর্ঘশ্বাস ফেলি
দূরযাত্রী নাম নিল দেবতার,
তালা দিয়ে রুধিল দুয়ার।
টেনে নিয়ে অনিচ্ছুক দেহটিরে
দাঁড়ালো বাহিরে।

ঊর্ধ্বে কালো আকাশের ফাঁকা
ঝাঁট দিয়ে চলে গেল বাদুড়ের পাখা।
যেন সে নির্মম
অনিশ্চিত-পানে-ধাওয়া অদৃষ্টের প্রেতচ্ছায়াসম।
বৃদ্ধবট মন্দিরের ধারে,
অজগর অন্ধকার গিলিয়াছে তারে।
সদ্য-মাটি-কাটা পুকুরের
পাড়ি-ধারে বাসা বাঁধা মজুরের
খেজুরের-পাতা-ছাওয়া, ক্ষীণ আলো করে মিট্ মিট্।
পাশে ভেঙে পড়া পাঁজা, তলায় ছড়ানো তার ইঁট।
রজনীর মসীলিপ্তি-মাঝে
লুপ্তরেখা সংসারের ছবি— ধান-কাটা কাজে
সারাবেলা চাষির ব্যস্ততা;
গলা-ধরাধরি কথা
মেয়েদের; ছুটি পাওয়া
ছেলেদের ধেয়ে-যাওয়া