পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছড়া
৮১১

ননদ গেল ঘুঘুডাঙায় সঙ্গে গেল চিন্তে;
লিলুয়াতে নেমে গেল ঘুড়ির লাটাই কিনতে।
লিলুয়াতে খইয়ের মোওয়া চার ধামা হয় বোঝাই,
দাম দিতে হায় টাকার থলি মিথ্যে হল খোঁজাই।
ননদ পরল রাঙা চেলি, পাল্কি চড়ে চলল,
পাড়ায় পাড়ায় রব উঠেছে, গায়ে হলুদ কল্য।
কাহারগুলো পাগড়ি বাঁধে, বাঁদি পরে ঘাগরা,
জমাদারের মামা পরে শুঁড়-তোলা তার নাগরা।
পাড়েজি তাঁর খড়ম নিয়ে চলেন খটাৎ খটাৎ।
কোথা থেকে ধোবার গাধা চেঁচিয়ে ওঠে হঠাৎ।
খয়রাডাঙার ময়রা আসে, কিনে আনে ময়দা;
পচা ঘিয়ের গন্ধ ছড়ায়— যমালয়ের পয়দা।
আকাশ থেকে নামল বোমা, রেডিয়ো তাই জানায়—
অপঘাতে বসুন্ধরা ভরল কানায় কানায়।
খাঁচার মধ্যে শ্যামা থাকে; ছিরকুটে খায় পোকা,
শিস দেয় সে মধুর স্বরে— হাততালি দেয় খোকা।

হুইস্‌ল্ বাজে ইস্‌টিশনে, বরের জ্যাঠামশাই
চমকে ওঠে— গেলেন কোথায় অগ্রদ্বীপের গোঁসাই!
সাঁৎরাগাছির নাচনমণি কাটতে গেল সাঁতার,
হায় রে কোথায় ভাসিয়ে দিল সোনার সিঁথি মাথার।
মোষের শিঙে ব’সে ফিঙে নেজ দুলিয়ে নাচে—
শুধোয় নাচন, ‘সিঁথি আমার নিয়েছে কোন্ মাছে?’
মাছের লেজের ঝাপটা লাগে, শালুক ওঠে দুলে;
রোদ পড়েছে নাচনমণির ভিজে চিকন চুলে।
কোথায় ঘাটের ফাটল থেকে ডাকল কোলা ব্যাঙ,
খড়গ্‌পুরের ঢাকে ঢোলে বাজল ড্যাড্যাঙ ড্যাঙ।
কাঁপছে ছায়া আঁকাবাঁকা, কলমিপাড়ের পুকুর—