পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছড়া
৮১৫

কী ভীষণ হাড়কাটা করাতের ফলা রে!
বিজ্ঞানীদল এল বর্লিন ঝাঁটিয়ে,
হাতপাকা, জন্তুর-নাড়িভুঁড়ি-ঘাঁটিয়ে।

জজ বলে, ‘বিড়ালটা কী রকম জানা চাই,
আইডেন্‌টিটি তার আদালতে আনা চাই।’
বিড়ালের দেখা নাই— ঘরেও না, বনে না;
মিআঁউ আওয়াজটুকু কেউ আর শোনে না।
জজ বলে, ‘সাক্ষীরে কোন্‌খানে ঢুকোলো,
অত বড়ো লেজের কি আগাগোড়া লুকোলো?’
পেয়াদা বললে, ‘লেজ গেছে মিউজিয়মে
প্রিভিকৌঁসিলে-দেওয়া আইনের নিয়মে।’
জজ বলে, ‘গোঁফ পেলে রবে মোর সম্মান।’
পেয়াদা বললে, ‘তারো নয় বড়ো কম মান;
মিউনিকে নিয়ে গেছে ছাঁটা গোঁফ যত্নেই,
তারে আর কোনোমতে ফেরাবার পথ নেই।’
বিড়াল ফেরার হল, নাই নামগন্ধ;
জজ বলে, ‘তাই ব’লে মামলা কি বন্ধ!’
তখনি চৌকি ছেড়ে রেগে করে পাচারি;
থেকে থেকে হুংকারে কেঁপে ওঠে কাছারি।
জজ বলে, ‘গেল কোথা ফরিয়াদি আসামি?’
‘হুজুর’ পেয়াদা বলে, ‘বেটাদের চাষামি!—
শুনি নাকি দুই ভাই উকিলের তাকাদায়,
বলে গেছে, আমাদের বুঝি বেঁচে থাকা দায়!
কণ্ঠে এমনি ফাঁস এঁটে দিল জড়িয়ে,
মোক্তারে কী করিবে সাক্ষীরে পড়িয়ে!’

শান্তিনিকেতন
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০