পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানসী
৮৩

অপেক্ষা

সকল বেল। কাটিয়া গেল, বিকাল নাহি যায়।
দিনের শেষে শ্রান্তছবি কিছুতে যেতে চায় না রবি,
চাহিয়া থাকে ধরণী-পানে—বিদায় নাহি চায়।

মেঘেতে দিন জড়ায়ে থাকে, মিলায়ে থাকে মাঠে,
পড়িয়া থাকে তরুর শিরে, কাঁপিতে থাকে নদীর নীরে—
দাঁড়ায়ে থাকে দীর্ঘ ছায়া মেলিয়া ঘাটে বাটে।

এখনো ঘুঘু ডাকিছে ডালে করুণ একতানে।
অলস দুখে দীর্ঘদিন ছিল সে বসে মিলনহীন,
এখনো তার বিরহগাথা বিরাম নাহি মানে।

বধূরা দেখো আইল ঘাটে, এল না ছায়া তবু।
কলসঘায়ে ঊর্মি টুটে, রশ্মিরাশি চূর্ণি উঠে,
শ্রান্ত বায়ু প্রান্তনীর চুম্বি যায় কভু।

দিবসশেষে বাহিরে এসে সেও কি এতখনে
নীলাম্বরে অঙ্গ ঘিরে নেমেছে সেই নিভৃত নীরে
প্রাচীরে ঘেরা ছায়াতে ঢাকা বিজন ফুলবনে।

স্নিগ্ধ জল মুগ্ধভাবে ধরেছে তনুখানি।
মধুর দুটি বাহুর ঘায় অগাধ জল টুটিয়া যায়,
গ্রীবার কাছে নাচিয়া উঠি করিছে কানাকানি।

কপোলে তার কিরণ প’ড়ে তুলেছে রাঙা করি,
মুখের ছায়া পড়িয়া জলে নিজেরে যেন খুঁজিছে ছলে,
জলের ’পরে ছড়ায়ে পড়ে আঁচল খসি পড়ি।

জলের ’পরে এলায়ে দিয়ে আপন রূপখানি,
শরমহীন আরামসুখে হাসিটি ভাসে মধুর মুখে,
বনের ছায়া ধরার চোখে দিয়েছে পাতা টানি।