পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
মানসী

সলিলতলে সোপান-’পরে উদাস বেশবাস।
আধেক কায়া আধেক ছায়া জলের ’পরে রচিছে মায়া,
দেহেরে যেন দেহের ছায়া করিছে পরিহাস।

আম্রবন মুকুলে-ভরা গন্ধ দেয় তীরে।
গোপন শাখে বিরহী পাখি আপন-মনে উঠিছে ডাকি,
বিবশ হয়ে বকুল ফুল খসিয়া পড়ে নীরে।

দিবস ক্রমে মুদিয়া আসে, মিলায়ে আসে আলো।
নিবিড় ঘন বনের রেখা আকাশশেষে যেতেছে দেখা,
নিদ্রালস আঁখির ’পরে ভুরুর মতো কালো।

বুঝি-বা তীরে উঠিয়াছে সে জলের কোল ছেড়ে।
ত্বরিত পদে চলেছে গেহে, সিক্ত বাস লিপ্ত দেহে—
যৌবনলাবণ্য যেন লইতে চাহে কেড়ে।

মাজিয়া তনু যতন ক’রে পরিবে নব বাস।
কাঁচল পরি, আঁচল টানি, আঁটিয়া লয়ে কাঁকনখানি,
নিপুণ করে রচিয়া বেণী বাঁধিবে কেশপাশ।

উরসে পরি যুথীর হার, বসনে মাথা ঢাকি,
বনের পথে নদীর তীরে অন্ধকারে বেড়াবে ধীরে
গন্ধটুকু সন্ধ্যাবায়ে রেখার মতো রাখি।

বাজিবে তার চরণধ্বনি বুকের শিরে শিরে।
কখন্‌ কাছে না আসিতে সে পরশ যেন লাগিবে এসে,
যেমন ক’রে দখিনবায়ু জাগায় ধরণীরে।

যেমনি কাছে দাঁড়াব গিয়ে আর কি হবে কথা!
ক্ষণেক শুধু অবশকায় থমকি রবে ছবির প্রায়,
মুখের পানে চাহিয়া শুধু সুখের আকুলতা।