পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

করিতে কষ্ট বোধ করিতে লাগিলেন, যজ্ঞাগ্নিক ধূমে মরুৎ-পরিষ্কৃত না হওয়াতেও জীবের পক্ষে শ্বাসপ্রশ্বাসক্রিয়া যেন কতকটা আয়াস-সাধ্য হইয়া উঠিল।

 রুদ্রের অপমানে পৃথিবীতে রৌদ্র প্রখর হইয়া উঠিল। ধরিত্রী জ্বালা বোধ করিতে লাগিলেন। দিগ্‌গজগণ ঘন ঘন আর্ত্তনাদ করিতে লাগিল। বালখিল্য ঋষিরা বৃক্ষের আশ্রয়চ্যুত হইতে উদ্যত হইলেন। দিক্‌পালগণ কম্পিতকলেবর হইতে লাগিলেন, তাঁহাদের নেত্রস্পন্দনে মুহুর্মুহু বসুন্ধরা কম্পিত হইতে লাগিল।

 শিব-হীন যজ্ঞে কে সাহস করিবে? পৃথিবী ক্রোধ ও বিদ্বেষের আগার হইয়া উঠিল। কারণ ধর্ম্ম শিবহীন। যাহার উদারান্ন সংস্থানের উপায় নাই, সে বিলাসী হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হইতে লাগিল, কারণ তাহার লক্ষ্য শিবহীন। পরিধেয় ও ভূষণের বাহুল্য হইল—অথচ গৃহে শিশুগণ না খাইয়া মৃতপ্রায়, গৃহ-কর্ত্তার সেদিকে দৃষ্টি নাই কারণ তাহার দৃষ্টি শিবহীন। গৃহকর্ত্রীরা বিলাসিনী হইয়া উঠিল, কারণ শিবহীন গৃহে অন্নপূর্ণার সাধনা কে করিবে? স্বেচ্ছায় কিংবা পরার্থে কেহ কণ্টকের আঁচড় স্বশরীরে সহ করিতে প্রস্তুত নহে, অথচ আলস্যজড়িত নিশ্চেষ্ট দেহ পরকৃত সর্ব্বপ্রকার অত্যাচার সহ্য করিতে লাগিল। প্রতারক ধর্ম্ম-যাজকগণ তামসিক ভাবকে সত্য গুণ বলিয়া প্রতিপন্ন করিতে লাগিল। বিলাস ও মূঢ়তা চরিত্রকে অধিকার করিয়া বসিল—কারণ ত্যাগী এবং সত্যস্বরূপ শিবের আদর্শ জগৎ হইতে অপসৃত হইল।

 ব্রহ্মার সৃষ্টি লুপ্ত হইতে চলিল। প্রশ্ন এই—“দক্ষ চাও না শিব চাও?” জগৎ এই দুয়ের অধিকার সহ্য করিতে অসন্মত। একদিকে দম্ভ, বল, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রবল দণ্ড-শক্তি—অপর দিকে ত্যাগ,

১৭