পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

হইলেন। চন্দ্রচূড়ের চন্দ্রবদনে শঙ্কার ছায়া পড়িল। নন্দিকেশ্বর সকলই জানিতেন। তিনি বলিলেন, “মা তোমার এবার পিত্রালয়ে যাইয়া কাজ নাই।”

 বিমনা হইয়া সতী চলিয়া গেলেন—নিপুণভাবে গৃহকর্ম্ম শেষ করিয়া দেবী কৈলাসপুরীর রম্য বনান্ত-ভূমিতে যাইয়া সন্ধ্যাকালে দাঁড়াইলেন। দেবী দেখিলেন—আকাশানুরঞ্জিত করিয়া সারি সারি রথ চলিতেছে। কোনটি মাণিক্য-খচিত, কোনটি মরাল-বাহন,—বুঝিলেন, ইহারা তাঁহার পিতৃগৃহের যাত্রী।

 সহসা সমুজ্জ্বল একখানি রথ সম্মুখে ভাসিয়া গেল। তাহা প্রদীপ্ত মণিময়। তন্মধ্যে রক্তপটাম্বরধারিণী মরকতহার-লম্বিত-কণ্ঠ-দেশা স্বাহাকে দেখিয়া তিনি চিনিতে পারিলেন। তৎপার্শ্বে কলহংসসদৃশ পাণ্ডুর চন্দ্রের বিমানে রোহিণী ও ভগিণীবর্গকে তিনি আভাসে দেখিতে পাইলেন।

 এবার দেবীর হৃদয় যেন শোকে বিদীর্ণ হইল। জননীর মুখখানি দেখিবার জন্য দেবীর হৃদয় ব্যাকুল হইয়া উঠিল। সেই উৎকণ্ঠায় মহাদেব স্থির থাকিতে পারিলেন না। তিনি দেবীর সন্মুখে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তাঁহার আনন্দময়ী তপস্বিনী নিরানন্দ, তদীয় বিম্বাধরের হাসি বিশুষ্ক, মলিন-নেত্র অশ্রুপূর্ণ।

 শিব বলিলেন, “দেবি, তুমি নিশ্চয়ই যাইবে?” সতী বলিলেন, “প্রভুর ইচ্ছা হইলে আমি যাইতে এখনই প্রস্তুত হইব।”

 শিব পুনরায় বলিলেন, “দেবি, আমি তোমাকে ছাড়িয়া দিতে ইচ্ছা করি না। কিন্তু তুমি নিরানন্দ হইলে কৈলাসপুরীর তপস্যা বৃথা হইয়া যায়। ঐ দেখ জবা-কুসুম শাখা-মলিন হইয়া গিয়াছে। বিল্বদল শুষ্কপ্রায়। পক্ষিগণ কাকলী বন্ধ করিয়াছে। তোমার ইচ্ছায় বাধা দেওয়ার শক্তি

২৭