পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

কপোলে অলকাতিলকার পরিবর্ত্তে বিভূতি! একি অপরূপ বেশ। নন্দিকেশ্বর কুবেরকে আহ্বান করিয়া দেবীর রাজরাজেশ্বরী-যোগ্য মণিখচিত পরিচ্ছদ আনয়ন করিতে বলিয়াছিলেন। দেবী তাহা নিষেধ করিয়া দিয়াছেন। তিনি যোগীর স্ত্রী যোগিণী; তপস্বিনীর বেশেই তিনি পরিতৃপ্ত, অন্য-বেশ তাহার প্রীতিকর নহে।

 এই বেশে দেবী আসিতেছেন। হীরামণি-খচিত পট্টাম্বরধারিণী যে সতীকে প্রসূতি সাজাইয়া হরকে প্রদান করিয়াছিলেন, এ ত সে সতী নহে। এ সতী বিচিত্র বর্ণোজ্জ্বল সৌরকরদীপ্ত কুসুমকোরক নহে। এ যেন সন্ধ্যামালতী—স্নিগ্ধ অনাড়ম্বর, কিন্তু চক্ষুর পরমতৃপ্তি-সাধক। সিংহ ধীরে ধীরে দক্ষালয়ের নিকটে আসিল, অমনই কলরব পড়িয়া গেল, সতী আসিয়াছে। সেই কলরব অন্তঃপুরের প্রাচীর উত্তীর্ণ হইয়া যজ্ঞবেদীর পার্শ্বস্থিত দক্ষের কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল, তাহাতে কঠিন হৃদয়ে অমৃতনিষিক্ত হইল। কিন্তু দক্ষ ঘৃণার দ্বারা প্রীতিকে পরাস্ত করিয়া বিমুখ হইয়া বসিলেন।

 কিন্তু যখন সেই কলরব প্রসূতির কর্ণে প্রবেশ করিল, তখন তিনি জাগ্রতা কি স্বপ্নাবিষ্টা তাহা বুঝিতে পারিলেন না। এ কি মৃগতৃষ্ণিকা, না—উন্মাদ চিত্তক্ষোভ! রাণী অন্তঃপুর-দ্বারে আসিলেন, “আমার সতী বক্ষে আয়” বলিয়া সিংহবাহিনীকে হস্তদ্বয় অগ্রসর করিয়া দিলেন। সেই মুহূর্ত্তে মাতা-কন্যা আলিঙ্গন-বদ্ধ হইয়া রহিলেন। উভয়ের গণ্ড প্লাবিত করিয়া নয়নাশ্রু পতিত হইতেছিল। কন্যা অভিমানিনী, মাতা লজ্জিতা। এই উৎসবেও মেয়ে বলিয়া মনে হইল না, মা, তোমার পাগল জামাতাকে ছাড়িয়া আসিতে বুক ফাটিয়া গিয়াছে, বিনা নিমন্ত্রণে তাঁহাকে আনিতে পারি নাই।

৩১