পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

“এই নাকি সতী! শিব আমার নিকট বলিয়া পাঠাইলে ত আমি একখানি রক্তমাণিক্যের অঙ্গদ ও দুইখানি হীরার বলয় পাঠাইতে পারিতাম!—এরূপ উৎসবেও কি এমন বেশে স্ত্রীকে পাঠাইতে হয়?” ছায়া ঘৃণার হাসি হাসিয়া বলিল, “দুইটা জবাফুল ও বিল্বদল চুলে আটকাইয়া আসিয়াছে। দেবরাজের কাছে বলিয়া পাঠাইলেও ত একগাছি পারিজাতের হার পাঠাইয়া দিতেন—আমাদের কর্ত্তার সঙ্গে ইন্দ্রের বড় ভাব, আমরা জানিলেও অনুরোধ করিতে পারিতাম।”

 সতী এই সকল মন্তব্য শুনিয়া অস্থির হইয়া উঠিলেন। তাঁহার একমুহূর্ত্তও তথায় তিষ্ঠিতে ইচ্ছা রহিল না, গণ্ড আরক্তিম হইল। তিনি যাহাদিগকে শৈশবসঙ্গিনী, প্রিয়-ভগিনী বলিয়া জানিতেন, যাহারা একটি বনফুল পাইলে তৃপ্ত হইত, একটুকু মুখের হাসিতে উল্লসিত হইত, এ ত তাহারা নহে। সেই সরল স্বচ্ছন্দ প্রাণ যজ্ঞের কবলিত হইয়াছে। সতীর হৃদয় সেই স্থান হইতে বহির্গত হইবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিল। এমন সময়ে অত্রির স্ত্রী অনসূয়া সেই স্থানে আসিয়া সতীকে দেখিয়া স্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইলেন। তিনি উৎসাহের স্বরে বলিয়া উঠিলেন, “এ কি দেখিতেছি, সাক্ষাৎ শক্তিরূপিণী এই মেয়ে নাকি সতী! মরি, বিনা ভূষণে, বল্কলবসনে, জবাকুসুম ও রুদ্রাক্ষে শ্রীমূর্ত্তির কি শোভা হইয়াছে! যোগিনীর মত কুণ্ডল মা তোমাকে বড় সাজিয়াছে, মা তোমার পদের অলক্তকরাগ ধরিত্রী শিরোধার্য্য করিয়া লইতেছে, বিভূতিতে কপোল বড় সাজিয়াছে। মা, কুবের তোমার ভাণ্ডারী, তথাপি তুমি সামান্য জবাফুল পরিয়া আসিয়াছ—তুমি এই ধনরত্নগর্ব্বিতা সুন্দরীগণের পার্শ্ব হইতে আমার নিকট এস।” আনন্দে প্রসূতির মুখ প্রসন্ন হইয়া উঠিল। তিনি সতীর প্রতি মন্তব্য শুনিয়া অধীয়া হইয় পড়িতেছিলেন। সতীকে অনসূয়ার সঙ্গিনী

৩৩