পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

করিয়া দিয়া মনে মনে শান্তিলাভ করিলেন। রোহিণী বলিল, “দেখ্‌লি, অনসূয়া মাসীর কথা, উহারা ঐ এক রকমের। স্বয়ং ভগবান দত্তাত্রেয় নাম ধারণ করিয়া উহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, এই গর্ব্বে উহার পা মাটিতে পড়িতে পায় না। উনি কর্দ্দমঋষির কন্যা, ভাঙ্গা কুঁড়েতে জন্ম, আধপেটা খাইয়া থাকেন, বাকল ভিন্ন একখানি খুঞাকাপড় কিনিবার কড়ি নাই, যা হোক, সতীর সঙ্গে মিশ্‌বে ভাল। বাবা কি সাধে ভাঙ্গড়ের যজ্ঞভাগ মানা করিয়া দিয়াছেন!” মুক্তবেণী দোলাইয়া আর্দ্রা রোহিণীর মুখ চাপিয়া ধরিয়া বলিল, “দিদি ও কথা বোল না, শিবের যজ্ঞভাগ মানা, এ কথা যেন সতীর কানে না উঠে; মা যে পুনঃ পুনঃ নিষেধ করিয়াছেন, তাহা কি মনে নাই।” রোহিণী বলিল, “সতী এখানে নাই, তাহার কানে এ কথা উঠাবে কে?”

 আম্রমুকুলের গন্ধে বাপীতীর ভরপুর। দক্ষভবনের পরে এক বিশাল শ্যামপট বিস্তারিত রহিয়াছে। দ্বিপ্রহরে সৌরকিরণে সুদূর পল্লীনিচয়ের তরুরাজি সমুজ্জ্বল। মনে হইল যেন হরিৎ শস্যে বসুন্ধরার শাড়ীর জমি প্রস্তুত হইয়াছে এবং সেই উজ্জ্বল, সুদূরে অবস্থিত বৃক্ষ পংক্তি সেই শাড়ীর পাড়। সতী সেই স্থানে অনসূয়ার সঙ্গে দাঁড়াইয়া মুক্তির আনন্দ অনুভব করিলেন। দক্ষালয় হইতে যে কৈলাসপুরীর গগনালম্বী চুড়া তিনি প্রত্যক্ষ করেন নাই, সেই মুক্তস্থানে দাঁড়াইয়া তাহা দৃষ্টি গোচর হইল। অনসূয়ার পুত্র দত্তাত্রেয়কে দেখিয়া সতী হস্ত বাড়াইয়া তাহাকে ধরিলেন। শিশু অষ্টমবর্ষীয়। সে একটি পূজার ফুলের ন্যায় পবিত্র। সতী বলিলেন, “এই শিশুর মুখে ভগবানের রূপ আঁকা রহিয়াছে, দেবমানুষ-সমাজে এমন অপূর্ব্ব শিশু আমি দেখি নাই।” অত্রিপত্নী বলিলেন, “তুমি কি জান না যে, ভগবান্‌ আমার উদরে অবস্থান

৩৪