পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

 দেবী এই বলিয়া নীরব হইলেন। অনসূয়া দেবীকে দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন। একদিকে দত্তাত্রেয়, অপরদিকে সতী, দুইই তাঁহার মনে অপত্যস্নেহের উচ্ছ্বাস জাগাইয়া তুলিল। ভাই-ভগিনীর মত দুইটিকে দেখা যাইতে লাগিল। শিবকে যাত্রাকালে প্রণাম করিয়া আসেন নাই, এত বড় ভুল তাঁহার কেন হইল এই চিন্তা সতীর মনে একটা কাঁটার মত বিঁধিতে লাগিল। চারিদিকে বিচিত্র বর্ণের রঙ্গিন ফুল ফুটিয়াছিল; শুভ্র বক-ফুলের অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি প্রসূন, কোমল-পত্রের মধ্যে পুষ্পতরু বদ্ধাঞ্জলীর মধ্যে শিবোপহারের মত দেখাইতে লাগিল; অজস্র মালতী ফুল শিবের পায়ের অজস্র অর্ঘ্যের ন্যায় পবিত্র বোধ হইল; পশ্চিমাকাশের ডুবন্ত সূর্য্যের আলো-রঞ্জিত মেঘখণ্ড শিবপূজার একটী বৃহৎ তাম্রকুণ্ডের মত দেখাইতে লাগিল। পলক-হীন চক্ষে সতী এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দিকে চহিয়া কহিলেন, “আজ সমস্ত জগত তাহার শোভাসৌন্দর্য্য লইয়া, দেবাদিদেব তোমারই পূজা করিতেছে! আমিই এই পূজারীদল হইতে বাদ পড়িয়াছি। বিচিত্র ফুলের উপকরণ লইয়া পূজারিণী প্রকৃতি তোমার উদ্দেশ্যে ভক্তিপ্রেম নিবেদন করিয়া দিতেছে। আজ আমি তোমার পদে একটি জবা-ফুলের অর্ঘ দিতে পারিলাম না, তোমার কর্ণে দুইটি ধুস্তুর পুষ্প পরাইতে পারিলাম ন—বিল্বদল পাদ-পদ্মে ঠেকাইয়া প্রণাম করিতে পারিলাম না—আজ আমার দিন বৃথা, শুধু তাহাই নহে, আজ আমার জীবন নিন্দিত, আমি তোমার নিন্দা কানে শুনিয়াছি; হে দেব! কবে আমি তোমার শত শত বীণার ন্যায় মধুর ও মহান কণ্ঠস্বর শুনিয়া কান জুড়াইব।”

 এই কল্পনার মধ্যে আত্মহারা সতী ডুবিয়া পড়িলেন। তখন অনসূয়ার কণ্ঠ-স্বরে তাঁহার চিন্তার সূত্র ছিন্ন হইল; অনসূয়া

৩৬