পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

মনে ব্রহ্মানন্দ জাগাইয়া দেয়। দেবতারা জগতের শ্রেষ্ঠ অশ্ব ও হস্তী আরোহণ করুন; এই বৃদ্ধ বৃষভ সকলের পরিত্যক্ত, ইহাই আমার যান-বাহন। এই আড়ম্বর, এই ঐশ্বর্য্য—এ সকলে আমার মন ভুলে না, আমি আত্মার পরম সম্পদ ব্রহ্মধ্যান ও ব্রহ্মানন্দ চাই, আর কিছুর প্রার্থী আমি নই।’ বলিতে বলিতে তাঁহার চক্ষু ধ্যান-মগ্ন হইল এবং তিনি সমাধি-সিন্ধুতে ডুবিয়া পড়িলেন; তখন তাঁহার মস্তক বেড়িয়া এক অপূর্ব্ব আলোচ্ছটা আসিতে লাগিল, এবং তিনি যে কোন নিগূঢ় তত্ত্বজ্ঞান লাভ করিয়া জগৎ ভুলিয়া গিয়াছেন, তাহার আভাস দিতে লাগিল! এই আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি অপরের বোধগম্য নহে। সুতরাং যদি শিবকে কেহ ভুল বুঝে, তবে দুঃখিত হইবে না। একদা বিষ্ণু বলিয়াছিলেন, “আমি সকল দেবতার পূজ্য, কিন্তু আমি শিবের পূজক। দেবতারা অমর কিন্তু তাঁহারাও মানুষের মত ঐশ্বর্য্য ও প্রতিষ্ঠার উপাসক। শিব নিস্পৃহ, নির্ধন, পাশমুক্ত, বন্ধনহীন। আমি কুবেরকে তাঁহার ভাণ্ডারী করিয়া দিয়াছিলাম, স্বর্ণময় কৈলাসপুরী তাঁহার নিবাস স্থির করিয়া দিয়াছিলাম, কিন্তু তিনি শ্মশান-বাসী, যুগে যুগে একদিনও কুবেরের খোঁজ লন নাই।’

 এই সময়ে প্রসূতি আসিয়া বলিলেন, “সতি! একবার কিছু খাইয়া যাও।” অনসূয়া সতীর হাত ধরিয়া ভোজনস্থানে উপস্থিত হইলেন। দক্ষের অপরাপর কন্যাগণ ভোজনে বসিয়াছেন, সতীকে সকলে আদর করিয়া তাঁহাদের মধ্যে বসাইলেন। কৃত্তিকা যত্নের সহিত সতীর কেশপাশ গুছাইতে গুছাইতে বলিলেন, “ভগিনি, তুমি কি বিরক্ত হইয়াছ? তা’ আর শিবপুরীর প্রসঙ্গে প্রয়োজন নাই। সকলেরই কিছু আঢ্য ঘরে বিবাহ হয় না; যাহার যা, তাহাই ভাল। মা তোমাকে

৩৮