পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

ভগিনীদিগের সকলকে তদ্রূপ এক একটি না দিলে নিজে লইত না; আমার নিকট হইতে কত ছন্দে তাহা আদায় করিয়া তবে ছাড়িত। সতী চলিয়া যাইবার পরে আমি দিনরাত্রি স্বপ্নের ন্যায় তাহার ছায়া আমার শয়নপ্রকোষ্ঠে, আম্রবাটিকায়, যজ্ঞশালে, পূজামণ্ডপে, খেলাঘরে দেখিতে পাইতাম; সতীর সেই মধুর হাসি, রত্নানুজড়িত কর্ণাবলম্বী কেশদাম, পদের অলক্তক-প্রভা ও নূপুর-শিঞ্জন আমার সর্ব্বদা মনে পড়িত। আহারের পর যে আমার ভুক্তাবশেষ খাইয়া তৃপ্ত হইত, নিদ্রায় যে শিয়রে বসিয়া আমায় ব্যজন করিত, কোথায়ও যাইতে হইলে পাদুকাদ্বয় ও উষ্ণীষ লইয়া আমার পার্শ্বে ভৃত্যের ন্যায় দাঁড়াইয়া থাকিত, যাওয়ার কালে দিদিদের জন্য এবং আমার জন্য এই জিনিষ আনিবে বলিয়া কানে কানে কত কহিয়া দিত, ব্রাহ্মণ ভোজন করাইবার জন্য, কাঙ্গালীর জন্য, কত সামগ্রী চাহিয়া লইত, প্রাতে সদ্যঃস্নাত হইয়া মূর্ত্তিমতী ঊষার ন্যায় দেবপূজার জন্য ফুল কুড়াইত, ঐ পথ দিয়া নিত্য নিত্য অন্তঃপুরে প্রবেশ করিত, সেই সতীকে ঐ পথ দিয়াই কৈলাসপুরীতে বিদায় করিয়া দিয়াছি। এই উৎসবে আজ ত্রিজগৎ নিমন্ত্রিত, যে আসিলে আমার গৃহ আনন্দময় হইবে, সেই আনন্দময়ীকে বাদ দিয়াছি—তথাপি আসিয়াছে। একবার বক্ষের ধনকে বক্ষে লইতে পারিলে যেন হৃদয়ের সকল জ্বালা জুড়াইত; আজ এই উৎসবের দিনে কেন জ্বলিয়া পুড়িয়া মরিতেছি।

 কিন্তু সহসা শিবের সেই নিশ্চেষ্ট প্রশান্ত উপেক্ষা ও নন্দীর ভ্রূকুটিকুটিলানন মনে পড়িল, চিন্তাস্রোত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হইল—“আমি প্রজাপতিগণের অধীশ্বর, সর্ব্বভূতের কর্ত্তা ও অধিনায়ক, আমাকে

৪৩