পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তত্ত্বের সারাৎসার। যিনি প্রতীয়মানের নির্মোক ভেদ করে গভীরে দৃষ্টিপাত করতে পারেন, তিনিই তাত্ত্বিক।

 উল্টো করে বলা যায়, সাহিত্যের কিংবা সমাজের কিংবা দর্শনের কোনো প্রতিবেদন থেকে নির্যাস খুঁজে নিতে চাইলে অন্তদৃষ্টির অধিকারী হওয়া আবশ্যিক। যাদের মনোযোগ কেবল বহিরঙ্গে সীমিত থাকে, তারা আসলে খোলসের চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে শাঁসের দিকে নজর দিতে ভুলে যায়। এরা চোখ থাকতেও অন্ধ, মন থাকতেও মননহীন। এইসব দৃষ্টিহীন জনেরাই প্রকরণ-সর্বস্ব হয় এবং বহু প্রজন্ম ধরে সুনির্দিষ্ট প্রথাসিদ্ধ পথে চলতে পারলে স্বস্তি বোধ করে। অতএব এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। যে এ ধরনের মানুষ-জনেরা তত্ত্বের ওপরে সবচেয়ে বেশি খঙ্গহস্ত। এই অচলায়তনের দ্বাররক্ষীরা সমালোচনার নামে নিরপেক্ষ বাক্যপিণ্ডের সমাবেশ ঘটিয়ে থাকে। প্রচলিত চিন্তা-পদ্ধতি বলতে যা বোঝায় তাকেই নির্বিচারে মান্যতা দিয়ে যায়। এদের মনে কখনো কোনো জিজ্ঞাসা জাগে না। তাই পাঠকও তাদের রাশিরাশি ভারাভারা বাক্যস্রোত থেকে নিজের মনে কোনো প্রশ্ন উঠে আসতে দেখেন না।

 দেখা যাচ্ছে, ধ্রুপদী গ্রিক ও রোমান মনীষা দৃষ্টির বিশেষত্বকেই সত্য সন্ধানের মুখ্য হোতা বলে জেনেছিল। অতএব তত্ত্ব মানে গভীর বিশ্বাস ও অবস্থান গ্রহণের প্রস্তাবনা। প্রাগুক্ত অভিধান দৃষ্টি ও তাত্ত্বিকতাকে অভিন্ন বলে জেনে এদের গভীরতর ব্যঞ্জনাকে প্রসারিত করে জানিয়েছে যে তত্ত্ব বা Theory হল ‘(a) belief, policy or procedure proposed or followed as the basis of action; a principle or plan of action; (b) an ideal or hypothetical set of facts, principles of circumstances, (c) the body of generalisations and principles developed in association with practice in a field of activity; (d) the coherent set of hypothetical, conceptual and pragmatic principles forming the general frame of reference for a field of enquiry; (e) a hypothetical entity of structure explaining or relating an observed set of facts' ইত্যাদি।

 বলা বাহুল্য, গ্রিক বিশ্ববীক্ষায় দেখা বা বীক্ষণ ছিল সমস্ত বৌদ্ধিক উপলব্ধির কেন্দ্রবিন্দু। তাই দৃষ্টির বহুধা-বিচ্ছুরণ মূল অভিধা থেকে ক্রমাগত নানা ধরনের ব্যঞ্জনা নিঙড়ে নিয়েছে। শুধু কি বৌদ্ধিক প্রক্রিয়ায়, গ্রিক জীবনের আরও দুটি প্রধান পরিসরে তত্ত্বের মূলাধার ‘দেখা’কে আমরা প্রসারিত হতে লক্ষ করি। যেমন জ্যামিতিক উপপাদ্য বা Theorem উদ্ভূত হয়েছে গ্রিক (এবং ল্যাটিন) Theorema থেকে যার আক্ষরিক ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে Sight বা Spectacle। ফরাসি ভাষায় Theoros হল Spectator অর্থাৎ দর্শক। সুতরাং এখানেও দেখারই রকমফের।

 এই দৃষ্টির বিচ্ছুরণ থেকে দেখা দিচ্ছে বস্তুতে বস্তুতে, প্রতীকে প্রতীকে, বস্তুতে প্রতীকে বিচিত্র সম্পর্কের টানাপোড়েন। এই দৃষ্টিই রয়েছে Theater বা নাট্য-ক্রিয়ায়। গ্রিক Theatron ইংরেজিতে বোঝাচ্ছে To see, view, action of seeing। আসলে

১৫৩