পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মনে হয়, দূরীকৃত অপর সত্তার চিহ্নায়িত বাচনই যেন ব্যক্ত হয়েছে। আজন্ম লালিত অভিজ্ঞতায় যে জনপদের মানুষেরা আধা-ঔপনিবেশিক শোষণে-লাঞ্ছনায়অপমানে অভ্যস্ত, যাদের ঘরের বদলে তাবু আছে শুধু অন্দরে-বাহিরে, যাঁদেরে ঘিরে থাকে দারিদ্র-মালিন্য-অপুষ্টি আর বহুবিধ প্রতাপের লেজুড়বৃত্তি—তাঁরা চেনেন না কাকে বলে ভূমি আর কাকে বলে আকাশ! কাকে বলে মরুভূমি আর কাকে বলে মানুষের পরিসরতা বোঝার আগেই গোষ্ঠী-ঘৃণার আগুন ঝলসে দিয়ে যায়। আর্থ-রাজনৈতিক বিন্যাসের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে ও উচ্চাবচতায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অতিসম্প্রতি তীব্রভাবে প্রকট হয়ে পড়েছে অন্তর্ঘাত ও হত্যার চারণভূমি। সমস্ত অস্থির ও অনিশ্চিত যখন, বাংলা ভাষা-ব্যবহারকারীদের মধ্যেও অবধারিতভাবে দেখা দিয়েছে নানাবিধ বিকার ও বিদূষণ, দুশ্চিকিৎস্য আত্মবিস্মৃতি ও অগভীর সফর সঞ্চরণ। সম্ভবত এইসব কিছুর জটিল প্রতিক্রিয়ায় এবং অনিবার্য মনস্তাত্ত্বিক কৌশল হিসেবে কূপমণ্ডুকতার আচরণবিধি মান্যতা পেয়ে গেছে। আরও একবার যেতে পারি কবিতার কাছে যেখানে ঐ পরিত্রাণহীন বিপন্নতায় আক্রান্ত অপরসত্তার প্রচ্ছন্ন হাহাকারই ব্যক্ত হয়েছে বলে ভাবা যেতে পারে:

‘এক ময়লা করেছি আমি
হাত নোঙরা করেছি আমি
আর নামব না নীচে ভাবি
তবু মদের গেলাসে নামি।

এক গেলাসে দুজন নামি
বড় গেলাসে দুজন নামি
অই গেলাস মানে সমাজ
যার ফেনায় পুড়েছি আমি।

বিষ পেরেকের মতো ঘৃণা
এসো বলব না পারছি না
এই পরবাস, অপমান
এর ভেতরেই করি গান।’

(ফেনায় পুড়েছি আমি)

 উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অজস্র জাতি ও উপজাতি সমান্তরালভাবে উপস্থিত রয়েছে কিন্তু সহাবস্থানে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুত্বর্গ Multiculturalism কিংবা Pluralism নিয়ে বহুদিন ধরে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিচ্ছেন, বই লিখছেন, আলোচনাচক্রে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে বিতর্ক করছেন। কিন্তু দেশীয় শাসক এবং ভূ-রাজনীতির তত্ত্বে বিশ্বাসী

১৮২