বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিঠিপত্র సెనె হাত পা নাড়িয়া কেবল একৃটা প্রহসন অভিনয় করিতেছে, এবং মনে করিতেছে দর্শকেরা শুদ্ধ কেবল আড়ি করিয়া হাসিতেছে, হাসির কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই। কিন্তু আজি এই সহস্ৰক্রোশ ব্যবধান হইতে বঙ্গভূমির মুগের চতুর্দিকে এক অপূৰ্ব্ব জ্যোতিৰ্ম্মণ্ডল দেখিতে পাইতেছি। বঙ্গদেশ আজ মা হইয়া বসিয়াছেন—তাহার কোলে বঙ্গবাসী নামে এক সুন্দর শিশু—তিমি হিমালয়ের পদপ্রান্তে সাগরের উপকূলে র্তাহার শুামল কানন র্তাহার পরিপূর্ণ শস্তক্ষেত্রের মধ্যে র্তাহার গঙ্গা ব্ৰহ্মপুত্রের তীরে এই শিশুটি কোলে করিয়া লালন করিতেছেন। এই সন্তানের মুখের দিকে মাতা অবনত হইয়া চাহিয়া আছেন, ইহাকে দেখিয়া তাহার মুখে আশা ও আনন্দের আভা দীপ্তি পাইয়া উঠিয়াছে। সহস্ৰ ক্রোশ অতিক্রম করিয়া আমি মায়ের মুখের সেই অাশার আলোক দেখিতে পাইতেছি। আমি আশ্বাস পাইতেছি এ সন্তান মরিবে না। বঙ্গভূমি এই সন্তানটিকে মানুষ করিয়া ইহাকে একদিন পৃথিবীর কাজে উৎসর্গ করিতে পারবেন। বঙ্গভূমির কোল হইতে আজ মাঝে মাঝে শিশুর হাসি শিশুর ক্ৰন্দন শুনিতেছি—বঙ্গভূমির সহস্র নিকুঞ্জ এতদিন নিস্তব্ধ ছিল, বঙ্গভবনে শিশুর কণ্ঠধ্বনি এতদিন শুনা যায় নাই, এতদিন এই ভাগীরথীর উভয় তীর কেবল শ্মশান বলিয়া মনে হইত। আজ বঙ্গভূমির আনন্দ উৎসব ভারতবর্ষের চারিদিক হইতে শুনা যাইতেছে। আজ ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তে যে নব জাতির জন্ম-সংগীত গান হইতেছে, ভারতবর্ষের দক্ষিণপ্রাস্ত পশ্চিমঘাটগিরির সীমান্ত দেশে বসিয়া আমি তাহা শুনিতে পাইতেছি । বঙ্গদেশের মধ্যে থাকিয়া যাহা কেবলমাত্র অর্থহীন কোলাহল মনে হইত এখানে তাহার এক বৃহৎ অর্থ দেখিতে পাইতেছি। এই দূর হইতে বঙ্গদেশের কেবল বর্তমান নহে ভবিষ্যৎ, প্রত্যক্ষ ঘটনাগুলিমাত্র নহে সুদূর সম্ভাবনাগুলি পৰ্য্যন্ত দেখিতে পাইতেছি। তাই আমার হৃদয়ে এক অনিৰ্ব্বচনীয় আশার সঞ্চার হইতেছে ।