পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
সমাজ

শাস্ত্রে দেশব্যাপী একটা লাঠালাঠি পড়িয়া গেল— আর যদি দৈবাৎ অনুস্বর বিসর্গবিশিষ্ট একটা বচনার্দ্ধ না পাওয়া গেল, তবে আমরা কি এমনই নিরুপায় যে, সমাজের সমস্ত অসম্পূর্ণতা সমস্ত দোষ শিরোধার্য্য করিয়া বহন করিব, এমন কি, তাহাকে পবিত্র বলিয়া পূজা করিব? দোষও কি প্রাচীন হইলে পূজ্য হয়?

 আমরা কি নিজের কর্ত্তব্যবুদ্ধির বলে মাথা তুলিয়া বলিতে পারি না— পূর্ব্বে কি ছিল এবং এখন কি আছে তাহা জানিতে চাহি না, সমাজেব যাহা দোষ তাহা দূর করিব, যাহা মঙ্গল তা আবাহন কবিয়া আনিব? আমাদেব শুভাশুভ জ্ঞানকে হস্তপদ ছেদন কবিয়া পঙ্গু করিয়া রাখিয়া দিব, আর একটা গুরুতর আবশ্যক পড়িলে, দেশের একটা মহৎ অনিষ্ট, একটা বৃদ্ধ অকল্যাণ দূর করিতে হইলে, সমস্ত পুরাণ সংহিতা আগম নিগম হইতে বচনখণ্ড খুঁজিয়া খুঁজিয়া উদ্ভ্রান্ত হইতে হহবে—সমাজের হিতাহিত লইয়া বয়স্ক লোকের মধ্যে এরূপ বাল্যখেলা আর কোনো দেশে প্রচলিত আছে কি?

 আমাদের ধর্ম্মবুদ্ধিকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া, যে লোকাচারকে তাহার স্থলে অভিষিক্ত করিয়াছি, সে আবার এমনি মূঢ় অন্ধ যে, সে নিজের নিয়মেরও সঙ্গতি রক্ষা করিতে জানে না। কত হিন্দু যবনের জাহাজে চড়িয়া উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, সিংহল ভ্রমণ করিয়া আসিতেছে— তাহাদের জাতি লইয়া কোনো কথা উঠিতেছে না, এদিকে সমুদ্রযাত্রা বিধিসঙ্গত নহে বলিয়া লোকসমাজ চীৎকার করিয়া মরিতেছে। দেশে শত শত লোক অখাদ্য ও যবনান্ন খাইয়া মানুষ হইয়া উঠিল, প্রকাশ্যে যবনের প্রস্তুত মদ্যপান করিতেছে, কেহ সেদিকে একবার তাকায়ও না, কিন্তু বিলাতে গিয়া পাছে অনাচার ঘটে এজন্য বড় শঙ্কিত! কিন্তু যুক্তি নিষ্ফল। যাহার চক্ষু আছে তাহার নিকট এ-সকল কথা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইবার আবশ্যক ছিল না। কিন্তু লোকাচার নামক