পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমুদ্রযাত্রা
১৩

প্রকাণ্ড জড় পুত্তলিকার মস্তকের অভ্যন্তরে ত মস্তিষ্ক নাই, সে একট নিশ্চল পাষাণপাত্র। কাককে ভয় দেখাইবাব নিমিত্ত গৃহস্থ হাড়ি চিত্রিত করিয়া শস্যক্ষেত্রে খাড়া করিয়া রাখে, লোকাচার সেইরূপ চিত্রিত বিভাষিকা। যে তাহার জড়ত্ব জানে সে তাহাকে ঘৃণা করে, যে তাহাকে ভয় করে তাহার কর্ত্তব্যবুদ্ধি লোপ পায়।

 আজকাল অনেক পুস্তক ও পত্রে আমাদের বর্ত্তমান লোকাচারে অসঙ্গতি দোষ দেখান হয়। বলা হয়, একদিকে আমরা বাধ্য হইয়া অথবা অন্ধ হইয়া কত অনাচাব করি, অন্যদিকে সামান্য আচার বিচার লইয়া কত কড়াকড়ি। কিন্তু হাসি পায় যখন ভাবিয়া দেখি, কাহাকে সে কথাগুলা বলা হইতেছে। শিশুরা পুত্তলিকার সঙ্গেও এমনি করিয়া কথা কয়। কে বলে লোকাচার শক্তি অথবা শাস্ত্র মানিয়া চলে? সে নিজেও এমন মহা অপরাধ স্বীকার করে না। তবে তাহাকে শক্তির কথা কেন বলি?

 সমাজের মধ্যে যে কোনো পরিবর্ত্তন ঘটিয়াছে তাহা বিনা যুক্তিতেই সাধিত হইয়াছে। গুরুগোবিন্দ, চৈতন্য যখন এই জাতিনিগড়বদ্ধ দেশে জাতিভেদ কথঞ্চিৎ শিথিল করেন তখন তাহা শক্তিবলে করেন নাই, চরিত্রবলে করিয়াছিলেন।

 আমাদের যদি এরূপ মত হয় যে সমুদ্রযাত্রার উপকার আছে, মনুর কোন নিষেধ বিনা কারণে ভাবতবর্ষীয়দিগকে চিরকালের জন্য কেবল পৃথিবীর একাংশেই বদ্ধ করিয়া রাখিতে চাহে, সেই কারাদণ্ডবিধান নিতান্ত অন্যায় ও অনিষ্টজনক, দেশে বিদেশে গিয়া জ্ঞান অর্জ্জন ও উন্নতিসাধন হইতে কোনো প্রাচীন বিধি আমাদিগকে বঞ্চিত করিতে পারে না, যিনি আমাদিগকে এই সমুদ্রবেষ্টিত পৃথিবীতে প্রেরণ করিয়াছেন, তিনি আমাদিগকে সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণের অধিকার দিয়াছেন—তবে আমবা আর কিছু শুনিতে চাহি না, তবে কোনো শ্লোকখণ্ড