পক্ষে সম্পূর্ণ অনুকূল নহে। আমাদের সমাজে কোনো প্রকার স্বাধীনতার কোনো অবসব নাই। আমরা নিশ্চেষ্ট, নিশ্চল, অন্ধভাবে সমাজের অন্ধকূপে এক অবস্থায় পড়িয়া থাকিব, লোকাচারের এই বিধান। মৃত্যুর ন্যায় শান্ত অবস্থা আর নাই, সেই অগাধ শান্তি লাভ কবিবার জন্য যতদূব সম্ভব আমাদের জীবনীশক্তি লোপ করা হইয়াছে। একটি সমগ্র বৃহৎ জাতিকে সম্পূর্ণ নিশ্চেষ্ট ও নির্জ্জীব করিয়া ফেলিতে অল্প আয়াজন করিতে হয় নাই। কারণ, মনুষ্যত্বের অভ্যন্তরে একটি অমর জীবনের বীজ নিহিত আছে যে, সে যদি কোনো ছিদ্র দিয়া একটুখানি স্বাধীন সূর্য্যালোক ও বৃষ্টিধারা প্রাপ্ত হয়, অমনি অঙ্কুরিত, পল্লবিত, বিকশিত হইয়া উঠিতে চেষ্টা করে। সেই ভয়ে আমাদের হিন্দুসমাজ কোথাও কোনো ছিদ্র রাখিতে চাহে না।
সমুদ্রপার হইয়া নূতন দেশে নূতন সভ্যতাব নূতন নূতন আদর্শলাভ করিয়া আমাদের মনের মধ্যে চিন্তার বন্ধন মুক্তি হইবে তাহার সন্দেহ নাই। সে-সমস্ত নিয়ম আমরা বিনা সংশয়ে আজন্মকাল পালন করিয়া আসিয়াছি, কখনও কারণ জিজ্ঞাসাও মনে উদয় হয় নাই, সে-সম্বন্ধে নানা যুক্তি তর্ক ও সন্দেহের উদ্ভব হইবে। সেই মানসিক আন্দোলনই হিন্দুসমাজের পক্ষে সর্ব্বাপেক্ষা আশঙ্কার কারণ। বাহ্যত ম্লেচ্ছ-সংসর্গ ও সমুদ্রপাব হওয়া কিছুই নহে কিন্তু সেই অন্তরের মধ্যে স্বাধীন মনুষ্যত্বের সঞ্চার হওয়াই যথার্থ লোকাচার-বিরুদ্ধ।
কিন্তু হায়! আমরা সমুদ্রপার না হইলেও মনু সংহিতা অন্য জাতিকে সমুদ্রপার হইতে নিষেধ করিতে পারে নাই। নূতন জ্ঞান, নূতন আদর্শ, নূতন সন্দেহ, নূতন বিশ্বাস জাহাজবোঝাই হইয়া এদেশে আসিয়া পৌঁছিতেছে। আমাদের যে গোড়াতেই ভ্রম। সমাজরক্ষার জন্য যদি আমাদের এত ভয়, এত ভাবনা, তবে গোড়ায় ইংরাজি শিক্ষা হইতে আপনাকে সযত্নে রক্ষা করা উচিত ছিল। পর্ব্বতকে যদি