পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
সমাজ

মহম্মদের নিকট যাইতে নিষেধ কর, মহম্মদ যে পর্ব্বতের কাছে আসে, তাহার উপায় কি? আমরা যেন ইংলণ্ডে না গেলাম কিন্তু ইংবাজি শিক্ষা সে আমাদের গৃহে গৃহে আসিয়া প্রবেশ করিতেছে। বাঁধটা সেই ত ভাঙ্গিয়াছে। আজ যে এত বাকচাতুবী, এত শাস্ত্র-সন্ধানের ধূম পড়িয়াছে, মনে আঘাত না পড়িলে ত তাহার কোনো আবশ্যক ছিল না।

 কিন্তু মূঢ় লোকাচার এমনি অন্ধ অথবা এমনি কপটাচারী যে, সে-দিকে কোনো দৃক্‌পাত নাহ। অতি বড় পবিত্র হিন্দুও শৈশব হইতে আপন পুত্রকে ইংরাজি শিখাইতেছে। এমন কি মাতৃভাষা শিখাইতেছে না। এবং শিক্ষাসমিতি-সভায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষাশিক্ষার প্রস্তাব উঠিতেছে তখন স্বদেশের লোকই ত তাহাতে প্রধান আপত্তি করিতেছে।

 কেরাণীগিরি না করিলে যে উদরপূর্ণ হয় না। পাশ করিতেই হইবে। পাশ না করিলে চাকরী চুলায় যাক, বিবাহ করা দুসাধ্য হইয়াছে। ইংরাজি শিক্ষার মর্য্যাদা দেশের আপামর সাধারণের মধ্যে এমনি বদ্ধমূল হইয়াছে।

 কিন্তু এ কি ভ্রম, এ কি দুরাশা! ইংবাজি শিক্ষাতে কেবলমাত্র যতটুকু কেরাণীগিরির সহায়তা করিবে ততটুকু আমরা গ্রহণ করিব, বাকীটুকু—আমাদের অন্তরে প্রবেশ লাভ কবিবে না! এ কি কখনো সম্ভব হয়। দীপশিখা কেবল যে আলো দেয় তাহা নহে, পলিতাটুকুও পোড়ায়, তেলটুকুও শেষ করে। ইংরাজিশিক্ষা কেবল যে মোটামোটা চাক্‌রি দেয় তাহা নহে, আমাদের লোকাচারের আবহমান সূত্রগুলিকেও পলে পলে দগ্ধ করিয়া ফেলে।

 এখন যতদিন এই শিক্ষা চলিবে এবং ইহার উপর আমাদের জীবিকানির্ব্বাহ নির্ভর করিবে, ততদিন যিনি যেমন তর্ক করুন, শাস্ত্র