হইলেও যথেষ্ট সরল হইত। ইহাতে সাধারণ লোকের চাল চলন বাড়িয়া যাইত না।
এখনকার দিনে ব্যক্তিগত ভোগের আদর্শ বাড়িয়া উঠিয়াছে, এই জন্য বাহবার স্রোত সেই মুখেই ফিরিয়াছে। এখন আহার পরিচ্ছদ, বাড়ি গাড়ি জুড়ি, আসবাবপত্রদ্বারা লোকে আপন মাহাত্ম্য ঘোষণা করিতেছে। ধনীতে ধনীতে এখন এই লইয়া প্রতিযোগিতা। ইহাতে যে কেবল তাহাদের চাল বাড়িয়া যাইতেছে তাহা নহে, যাহারা অশক্ত তাাদেরও বাড়িতেছে। আমাদের দেশে ইহাতে যে কতদূর পর্য্যন্ত দুঃখ সৃষ্টি করিতেছে, তাহা আলোচনা করিলেই বুঝা যাইবে। কারণ, আমাদের সমাজের গঠন এখনো বদলায় নাই। এ সমাজ বহুসম্বন্ধবিশিষ্ট। দূর নিকট, স্বজন পরিজন, অনুচর পরিচর, কাহাকেও এ সমাজ অস্বীকার করে না। অতএব এ সমাজের ক্রিয়াকর্ম্ম বৃহৎ হইতে গেলেই সরল হওয়া অত্যাবশ্যক। না হইলে মানুষের পক্ষে অসাধ্য হইয়া পড়ে। পূর্ব্বেই বলিয়াছি এ পর্য্যন্ত আমাদের সামাজিক কর্ম্মে এই সরলতা ও বিপুলতাব সামঞ্জস্য ছিল, এখন সাধারণের চাল চলন বাড়িয়া গেছে অথচ এখন আমাদের সমাজের পরিধি সে পরিমাণে সঙ্কুচিত হয় নাই, এই জন্য সাধারণ লোকের সমাজকৃত্য দুঃসাধ্য হইয়া পড়িয়াছে।
আমি জানি, এক ব্যক্তি ত্রিশ টাকা বেতনে কর্ম্ম করে। তাহার পিতার মৃত্যু হইলে পর পিতৃবিয়োগের অপেক্ষা শ্রাদ্ধের ভাবনা তাহাকে অধিক পীড়িত করিতে লাগিল। আমি তাহাকে বলিলাম, “তোমার আয়ের অনুপাতে তোমার সাধ্য অনুসারে কর্ম্ম নির্ব্বাহ কর না কেন?” সে বলিল, তাহার কোনো উপায় নাই— গ্রামের লোক ও আত্মীয় কুটুম্বমণ্ডলীকে না খাওয়াইলে তাহার বিপদ্ ঘটিবে। এই দরিদ্রের প্রতি সমাজের দাবী সম্পূর্ণই রহিয়াছে অথচ সমাজের ক্ষুধা বাড়িয়া গেছে! পূর্ব্বে যেরূপ আয়োজনে সাধারণের তৃপ্তি হইত এখন আর তাহা হয় না।