পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচ্য ও প্রতীচ্য
৫১

স্ত্রীলোকদের কতই বা শিক্ষা হবে। স্ত্রীলোকেরা স্বভাবতই সমাজের যে অন্তরের স্থান অধিকার করে’ থাকেন সেখানে পাক ধরতে কিঞ্চিৎ বিলম্ব হয়। য়ুরোপের স্ত্রীলোকদেব অবস্থা আলোচনা করলেও তাই দেখা যায়। অতএব আমাদেব পুরুষদেব শিক্ষার বিকাশলাভের পূর্ব্বেই যদি আমাদেব অধিকাংশ নাবীদের শিক্ষাব সম্পূর্ণতা প্রত্যাশা করি তাহলে ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার প্রয়াস প্রকাশ পায়।

 তবে এ কথা বলতেই হয় ইংরাজস্ত্রীলোক অশিক্ষিত থাকলে যতটা অসম্পূর্ণ স্বভাব থাকে আমাদের পরিপূর্ণ গৃহের প্রসাদে আমাদের রমণীর জীবনের শিক্ষা সহজেই তার চেয়ে অধিকতর সম্পূর্ণতা লাভ করে।

 কিন্তু এই বিপুল গৃহেব তাঁবে আমাদের জাতিব আর বৃদ্ধি হ’তেই পেলে না। গার্হস্থ্য উত্তরোত্তর এমনি অসম্ভব প্রকাণ্ড হয়ে পড়েছে যে নিজ গৃহের বাহিরের জন্যে আর কারো কোনো শক্তি অবশিষ্ট থাকে না। অনেক গুলায় একত্রে জড়ীভূত হয়ে সকলকেই সমান খর্ব্ব করে’ বেখে দেয়। সমাজটা অত্যন্ত ঘনসন্নিবিষ্ট একটা জঙ্গলের মত হয়ে যায় তার সহস্র বাধাবন্ধনের মধ্যে কোনো একজনের মাথা ঝাড়া দিয়ে ওঠা বিষম শক্ত হয়ে পড়ে।

 এই ঘনিষ্ঠ পবিবারের বন্ধনপাশে পড়ে’ এদেশে জাতি হয় না, দেশ হয় না, বিশ্ববিজয়ী মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি পায় না। পিতামাতা হয়েছে, পুত্র হয়েছে, ভাই হয়েছে, স্ত্রী হয়েছে, এবং এই নিবিড় সমাজশক্তির প্রতিক্রিয়াবশে অনেক বৈবাগী সন্ন্যাসীও হয়েছে কিন্তু বৃহৎ সংসারের জন্যে কেউ জন্মেনি—পরিবারকেই আমবা সংসার বলে’ থাকি।

 কিন্তু য়ুরোপে আবাব আর এক কাণ্ড দেখা যাচ্চে। য়ুরোপীয়ের গৃহবন্ধন অপেক্ষাকৃত শিথিল বলে’ তাঁদের মধ্যে অনেকে যেমন সমস্ত ক্ষমতা স্বজাতি কিম্বা মানবহিতব্রতে প্রযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন তেমনি আরেকদিকে অনেকেই সংসারের মধ্যে, কেবলমাত্র নিজেকেই