বেগবতী মহানদী নিজে বালুকা সংগ্রহ করে’ এনে অবশেষে নিজের পথরোধ করে’ বসে। য়ুরোপীয় সভ্যতাকে সেই রকম প্রবল নদী বলে’ এক একবার মনে হয়। তার বেগের বলে, মানুষের পক্ষে যা সামান্য আবশ্যক এমন সকল বস্তুও চতুর্দ্দিক থেকে আনীত হয়ে রাশীকৃত হযে দাঁড়াচ্চে। সভ্যতার প্রতিবর্ষের আবর্জ্জনা পর্ব্বতাকার হয়ে উঠ্চে। আর আমাদের সঙ্কীর্ণ নদীটি নিতান্ত ক্ষীণ স্রোত ধারণ করে’ অবশেষে মধ্যপথে পারিবারিক ঘন শৈবালজালের মধ্যে জড়ীভূত হয়ে আচ্ছন্নপ্রায় হয়ে গেছে। কিন্তু তারো একটি শোভা সরসতা শ্যামলতা আছে। তার মধ্যে বেগ নেই, বল নেই, ব্যাপ্তি নেই, কিন্তু মৃদুতা স্নিগ্ধতা সহিষ্ণুতা আছে।
আর, যদি আমার আশঙ্কা সত্য হয়, তবে য়ুরোপীয় সভ্যতা হয়ত বা তলে তলে জড়ত্বের এক প্রকাণ্ড মরুভূমি সৃজন করচে, গৃহ, যা মানুষের স্নেহ প্রেমের নিভৃত নিকেতন, কল্যাণের চিরউৎসভূমি, পৃথিবীর আর সমস্তই লুপ্ত হয়ে গেলেও যেখানে একটুখানি স্থান থাকা মানুষের পক্ষে চরম আবশ্যক স্তূপাকার বাহ্যবস্তুর দ্বারা সেই খানটা উত্তরোত্তর ভরাট করে’ ফেলচে, হৃদয়ে জন্মভূমি জড় আববণে কঠিন হয়ে উঠ্চে।
যা হোক্, আমার মত অভাজন লোকের পক্ষে য়ুরোপীয় সভ্যতার পরিণাম অন্বষণের চেষ্টা অনেকটা আদার ব্যাপারীর জাহাজেব তথ্য নেওয়ার মত হয়। তবে একটা নির্ভয়েব কথা এই যে, আমি যে কোনো অনুমানই ব্যক্ত করি না কেন, তার সত্য মিথ্যা পরীক্ষার এত বিলম্ব আছে যে ততদিনে আমি এখানকার দণ্ড পুরস্কারের হাত এড়িয়ে বিস্মৃতি-রাজ্যে অজ্ঞাতবাস গ্রহণ করব। অতএব এ-সকল কথা যিনি যে ভাবেই নিন আমি তার জবাবদিহি করতে চাই না। কিন্তু য়ুরোপের স্ত্রীলোক সম্বন্ধে যে কথাটা বল্ছিলুম সেটা নিতান্ত অবজ্ঞার যোগ্য বলে’ আমার বোধ হয় না।