পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
সমাজ

 যে দেশে গৃহ নষ্ট হয়ে ক্রমে হোটেল বৃদ্ধি হচ্চে, যে যার নিজে নিজে উপার্জ্জন করচে এবং আপনার ঘরটি, Easy chairটি, কুকুরটি, ঘোড়াটি, বন্দুকটি, চুরটের পাইপটি এবং জুয়াখেলবার ক্লাবটি নিয়ে নির্ব্বিঘ্ন আরামের চেষ্টায় প্রবৃত্ত আছে সেখানে নিশ্চয়ই মেয়েদের মৌচাক ভেঙ্গে গেছে। পূর্ব্বে সেবক-মক্ষিকারা মধু অন্বেষণ করে’ চাকে সঞ্চয় করত এবং রাজ্ঞী মক্ষিকারা কর্ত্তৃত্ব করতেন, এখন স্বার্থপবগণ যে-যার নিজের নিজের চাক ভাড়া করে’ সকালে মধু উপার্জ্জনপূর্ব্বক সন্ধ্যাপর্য্যন্ত একাকী নিঃশেষে উপভোগ করচে। সুতরাং রাণী মক্ষিকাদের এখন বেরোতে হচ্ছে, কেবলমাত্র মধুদান এবং মধুপান করবার আর সময় নেই। বর্ত্তমান অবস্থা এখনো তাঁদেব স্বাভাবিক হয়ে যায়নি এই জন্যে অনেকটা পরিমাণে অসহায়ভাবে তাঁরা ইতস্তত ভন ভন করে’ বেড়াচ্চেন। আমরা আমাদের মহারাণীদের রাজত্বে বেশ আছি এবং তাঁরাও আমাদের অন্তঃপুর অর্থাৎ আমাদের পারিবারিক সমাজের মর্ম্ম স্থানটি অধিকার করে’ সকল ক’টিকে নিয়ে বেশ সুখে আছেন।

 কিন্তু সম্প্রতি সমাজের নানা বিষয়ে অবস্তান্তর ঘট্‌চে। দেশের আর্থিক অবস্থার এমন পরিবর্ত্তন হয়েছে যে জীবনযাত্রার প্রণালী স্বতই ভিন্ন আকার ধারণ কর্‌চে এবং সেই সূত্রে আমাদের একান্নবর্ত্তী পরিবার কালক্রমে কথঞ্চিৎ বিশ্লিষ্ট হবার মত বোধ হচ্চে। সেই সঙ্গে ক্রমশ আমাদের স্ত্রীলোকদের অবস্থা পরিবর্ত্তন আবশ্যক এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়্‌বে। কেবলমাত্র গৃহলুণ্ঠিত কোমল হৃদয়রাশি হয়ে থাকলে চল্‌বে না, মেরুদণ্ডের উপর ভর করে’ উন্নত উৎসাহী ভাবে স্বামীব পার্শ্বচারিণী হ’তে হবে।

 অতএব স্ত্রীশিক্ষা প্রচলিত না হ’লে বর্ত্তমান শিক্ষিত সমাজে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সামঞ্জস্য নষ্ট হয়। আমাদের দেশে বিদেশী শিক্ষা প্রচলিত হওয়াতে, ইংরাজি যে জানে এবং ইংরাজি যে জানে না তাহাদের মধ্যে