বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচ্য ও প্রতীচ্য
৫৯

 অনেকের কাছে এ “আইডিয়াল্”টা আশানুরূপ উচ্চ না মনে হ’তেও পারে কিন্তু আমার কাছে এটা বেশ সঙ্গত বোধ হয়। এমন কি, আমার মনে হয় পালোয়ান হওয়া আইডিয়াল নয়, সুস্থ হওয়াই আইডিয়াল্। অভ্রভেদী মন্যুমেণ্ট্ কিম্বা পিরামিড্ আইডিয়াল্ নয়, বায়ু ও আলোকগম্য বাসযোগ্য সুদৃঢ় গৃহই আইডিয়াল।

 একটা জ্যামিতির রেখা যতই দীর্ঘ এবং উন্নত করে’ তোলা যায় তা’কে আকৃতির উচ্চ আদর্শ বলা যায় না। তেমনি মানবের বিচিত্র বৃত্তির সহিত সামঞ্জস্যরহিত একটা হঠাৎগগনস্পর্শী বিশেষত্বকে মনুষ্যত্বের আইডিয়াল্ বলা যায় না। আমাদের অন্তর এবং বাহিরের সম্যক্ স্ফূর্ত্তি সাধন করে’ আমাদের বিশেষ ক্ষমতাকে সুস্থ সুন্দর ভাবে সাধারণ প্রকৃতির অঙ্গীভূত করে’ দেওয়াই আমাদের যথার্থ সুপরিণতি।

 আশা করি আমরা নানা ভ্রম এবং নানা আঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে পূর্ণ মনুষ্যত্বের দিকেই যাচ্চি। এখনো আমরা দুই বিপরীত শক্তির মধ্যে দোদুল্যমান, তাই উভয় পক্ষের সত্যকেই অনিশ্চিত ছায়ার মত অস্পষ্ট দেখাচ্চে, কেবল মাঝে মাঝে ক্ষণেকের জন্য মধ্য আশ্রয়টি উপলব্ধি করে’ ভবিষ্যতের পক্ষে একটা স্থির আশাভরসা জন্মে। আমার এই অসংলগ্ন অসম্পূর্ণ রচনায় পর্য্যায়ক্রমে সেই আশা ও আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হয়েছে।

 ১২৯৮।