পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অযোগ্য ভক্তি
৬৩

তাহাকে সংশোধন করিবার জন্য ততটা নহে, কিন্তু যাহারা সাধারণ লোক তাহাদিগকে ভক্তির কুফল হইতে রক্ষা করিবার জন্য।

 অহঙ্কারের কুফল সম্বন্ধে নীতিশাস্ত্রমাত্রেই আমাদিগকে সতর্ক করিয়া রাখে। অহঙ্কারে লোকের পতন হয় কেন? প্রথম কারণ, নিজের বড়ত্ব সম্বন্ধে অতিবিশ্বাস থাকাতে সে পরকে ঠিকমত জানিতে পাবে না; যে সংসারে পাঁচজনের সহিত বাস করিতে ও কাজ করিতে হয় সেখানে নিজের তুলনায় অন্যকে যথার্থরূপে জানিতে পারিলে তবেই সকল বিষযে সফলতা লাভ করা সম্ভব। চীন দেশে আত্মাভিমানের প্রবলতায় জাপানকে চিনিতে পারে নাই। তাই তাহার এমন অকস্মাৎ দুর্গতি ঘটিল। জর্ম্মানির সহিত যুদ্ধের পূর্ব্বে ফ্রান্সেরও সেই দশ। ঘটিয়াছিল। আব অতি দর্পে হতা লঙ্কা, একথা আমাদের দেশে প্রসিদ্ধ। ইংরাজিতে একটা প্রবাদ আছে, জ্ঞানই বল। কি গৃহে, কি কর্ম্মক্ষেত্রে পরের সম্বন্ধে ঠিকমত জ্ঞানই আমাদের প্রধান বল। অহঙ্কার সেই সম্বন্ধে অজ্ঞতা আনয়ন করিয়া আমাদের দুর্ব্বলতার প্রধান কারণ হইয়া থাকে।

 অহঙ্কারের আর এক বিপদ, তাহা সংসারকে আমাদের প্রতিকূলে দাঁড় করায়। যিনি যত বড় লোকই হোন্ না কেন সংসারের কাছে নানা বিষয়ে ঋণী; যে লোক সবিনয়ে সেই ঋণ স্বীকার করিতে না চাহে তাহার পক্ষে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়।

 কিন্তু সর্ব্বাপেক্ষা বিপদ আর একটি আছে। বড়কে বড় বলিয়া জানায় একটি অধ্যাত্মিক আনন্দ আছে। আত্মার বিস্তার হয় বলিয়া সে আনন্দ। অহঙ্কার আমাদিগকে নিজের সঙ্কীর্ণতার মধ্যে বদ্ধ করিয়া বাখে, যাহার ভক্তি নাই, সে জানে না অহঙ্কারের অধিকার কত সঙ্কীর্ণ; যাহার ভক্তি আছে সেই জানে আপনার বাহিরে যে বৃহত্ত্ব যে মহত্ত্ব তাহাই অনুভব করাতেই আত্মার মুক্তি।