পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অযোগ্য ভক্তি
৬৫

ব্যগ্রতার সহিত তাড়াতাড়ি আপনার প্রশ্নের উত্তর পাইতে চায় অধিকাংশ স্থলেই সে ভুল উত্তর পায়। যে-কোনো প্রকারে হৌক্ জিজ্ঞাসাবৃত্তির নিবৃত্তিই মুখ্য লক্ষ্য হওয়া উচিত নহে, সত্য নির্ণয়ই জিজ্ঞাসার প্রকৃত পরিণাম ৷

 তেমনি, তাড়াতাড়ি কোনো প্রকারে ভক্তিবৃত্তির পরিতৃপ্তি সাধনই ভক্তির সার্থকতা নহে। বরঞ্চ কোনোমতে আপনাকে পরিতৃপ্ত করিবার অতিমাত্র আগ্রহে সে আপনাকে ভ্রান্ত পথে লইয়া যায়। এইরূপে সে মিথ্যা দেবতা, আত্মাবমান ও সহজ সাধনার সৃষ্টি করিতে থাকে। মহত্ত্বের ধারণাই ভক্তির লক্ষ্য তা সে যতই কঠিন হৌক্‌; আত্মপরিতৃপ্তি নহে, তা সে যতই সহজ ও সুখকর হৌক্‌! জিজ্ঞাসা বৃত্তির পথে বুদ্ধিবিচারই প্রধান আবশ্যক বাধা। সেই সঙ্গে একটা অভিমানও আছে। অভিমান বলে, আমাকে ফাঁকি দিতে পারিবে না। আমি এমন অপদার্থ নহি। যাহা তাহাকে আমি সত্য বলিয়া মানিতে পারি না। আগে আমার সমস্ত সংশয়কে পরাস্ত কর তবেই আমি সত্যকে সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি।

 ভক্তিপথেও সেই বুদ্ধিবিচার ও অভিমানই অত্যাবশ্যক বাধা। সেই বাধা থাকিলে তবেই ভক্তি—যথার্থ ভক্তিভাজনকে আশ্রয় করিয়া আপনাকে চরিতার্থ করে। অভিমান সহজে মাথা নত হইতে দেয় না। যখন সে আত্মসমর্পণ করে তখন ভক্তিভাজনের পরীক্ষা হইয়া গেছে, রামচন্দ্র তখন ধনুক ভাঙিয়া তবে তাঁহার বলের প্রমাণ দিয়াছেন। সেই বাধা না থাকিলে ভক্তি অলস হইয। যায়, অন্ধ হইয়া যায়, কলের পুতুলের মত নির্ব্বিচারে ক্ষণে ক্ষণে মাথা নত করিয়া সে আপনাকে কৃতার্থ জ্ঞান করে। এইরূপে ভক্তি অধ্যাত্মশক্তি হইতে মোহে পরিণত হয় ৷

 অনেক সময় আমরা ভুল বুঝিয়া ভক্তি করি। যাহাকে মহৎ