সমাজ যুদ্ধের জন্ত প্রস্তুত হইতে পারে না, সকল মানুষকেই তেমনি সহস্ৰ দস্তুরে বন্ধ থাকিতে হয়, নতুবা তাহারা সমাজের কার্য্য পালনের জন্ত প্রস্তুত হইতে পারে না। যে গুরুজনকে তুমি প্রণাম কবিয়া থাক, যাহাকে প্রত্যেক চিঠিপত্রে তুমি ভক্তির সম্ভাষণ কর, যাহাকে দেখিলে তুমি উঠিয়া দাড়াও, ইচ্ছা করিলেও সহসা তাহাকে তুমি অমান্ত করিতে পার না। সহস্র দস্তুর পালন করিয়া এমনি তোমার মনে শিক্ষা হইয়৷ যায় যে গুরুজনকে মান্ত করা তোমার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হইয়া উঠে, না করা তোমার পক্ষে সাধ্যাতীত হইয়া উঠে। আমাদের প্রাচীন দস্তুর সমস্ত ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া আমব এই সকল শিক্ষা হইতে বঞ্চিত হইতেছি। ভক্তি-স্নেহের বন্ধন ছিড়িয়া যাইতেছে। পারিবারিক সম্বন্ধ উণ্টাপাল্ট হইয়া যাইতেছে। সমাজে বিশৃঙ্খলা জন্মিয়াছে। তুমি দাদামহাশয়কে প্রণাম করিয়া চিঠি লিখিতে আরম্ভ কর না সেটা শুনিতে অতি সামান্ত বোধ হইতে পাবে কিন্তু নিতান্ত সামান্ত নহে। কতকগুলি দস্তুর আমাদের হৃদয়ের সহিত জড়িত, তাহার কতটুকু দস্তুব বা কতটুকু হৃদয়ের কার্য্য বলা যায় না। অকৃত্রিম ভক্তির উচ্ছাসে আমরা প্রণাম করি কেন ? প্রণাম করাও ত একটা দস্তুর । এমন দেশ আছে যেখানে ভক্তিভাবে প্রণাম না করিয়া আর কিছু করে। আমরা প্রণাম না করিয়া হা করিনা কেন ! প্রণামের প্রকৃত তাৎপৰ্য্য এই যে ভক্তির বাহালক্ষণস্বরূপ এক প্রকার অঙ্গভঙ্গী আমাদের দেশে চলিয়া আসিতেছে। যাহাকে আমরা ভক্তি করি তাহাকে স্বভাবতই আমাদের হৃদয়ের ভক্তি দেখাইতে ইচ্ছা হয়, প্রণাম করা সেই ভক্তি দেখাইবার উপায় মাত্র। আমি যদি প্রণাম না করিয়া ভক্তিভরে তিনবার হাততালি দিই তাহ হইলে ঘাঁহাকে ভক্তি করিলাম তিনি কিছুই বুঝতে পরিবেন না। এমন কি তাহ অপমান জ্ঞান করিতে পারেন। ভক্তি দেখাইবার সময়ে হাততালি দেওয়াই যদি দস্তুর থাকিত তাঁহা হইলে
পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২
অবয়ব