বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ն-8 সমাজ স্বকাল, পরকাল, এ এক নূতন কথা তুমি তুলিয়াছ। পরকালট নূতন নয়—সমুখের এক জোড়া দাত বিসর্জন দিয়া অবধি ঐ কালের কথাটাই ভাবিতেছি—কিন্তু স্বকাল আবার কি ? কালের কি কিছু স্থিরতা আছে না কি ! আমরা কি ভাসিয়া যাইবার জন্ত আসিয়াছি যে, কালস্রোতের উপর হাল ছাড়িয়া দিয়া বসিয়া থাকিব ? মহৎ মনুষ্যত্বের আদর্শ কি স্রোতের মধ্যবর্তী শৈলের মত কালকে অতিক্রম করিয়া বিরাজ করিতেছ না । আমরা পরিবর্তনের মধ্যে থাকি বলিয়াই একটা স্থির লক্ষ্যের প্রতি বেশী দৃষ্টি রাখা আবশুক। নহিলে কিছুক্ষণ বাদে আর কিছুই ঠাহর হয় ন!—নহিলে আমরা পরিবর্তনের দাস হইয়া পড়ি। পরিবর্তনের খেলনা হইয়া পড়ি। তুমি যেরূপ লিখিয়াছ তাহাতে তুমি পরিবর্তনকেই প্রভু বলিয়াছ, কালকেই কৰ্ত্ত বলিয়া মানিয়াছ—অর্থাৎ ঘোড়াকেই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়াছ এবং আরোহীকেই তাহার অধীন বলিয়া প্রচার করিতেছ। কালের প্রতি ভক্তি এইটেষ্ট তুমি সার ধরিয়া লইয়াছ, কিন্তু মনুষ্যত্বের প্রতি, ধ্রুব আদর্শের প্রতি ভক্তি তাহ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ । মনুষ্যের প্রতি প্রেম, পিতার প্রতি ভক্তি, পুত্রের প্রতি স্নেহ—এ যে কেবল পরিবর্তনশীল ক্ষুদ্র কালবিশেষের ধৰ্ম্ম, এ-কথা কে বলিতে সাহস করে । এ-ধৰ্ম্ম সকল কালের উপরেই মার্থী তুলিয়া আছে। “উনবিংশ শতাব্দীর” ধূলি উড়াইয়া ইহাকে চোখের আড়াল করিতে পার, তাই বলিয়া ফুয়ের জোরে ইহাকে একবারে ধূলিসাৎ করিতে পার না ! যদি সত্যই এমন দেখিয়া থাক যে এখনকার কালে পিতা মাতাকে কেহ ভক্তি করে না, অতিথিকে কেহ যত্ন করে না, প্রতিবেশীদিগকে কেহ সাহায্য করে ন—তরে এখনকার কালের জন্ত শোক কর, কালের দোহাই দিয়া অধৰ্ম্মকে ধৰ্ম্ম বলিয়া প্রচার করিয়ো না ।