পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
সমাজ

মধ্যে ইহারা প্রবেশ করিতে পারিল না—কেবল বাষ্পময় ভাষার প্রতিমাগুলি আমাদের সাহিত্যে কুজ্ঝটিকা রচনা করিতে লাগিল।

 আমরা আশা করিয়া আছি ইংরাজি শিক্ষার প্রভাবে এ-সকল সঙ্কীর্ণতা ক্রমে আমাদের মন হইতে দূর হইয়া যাইবে। এই শিক্ষার প্রতি বিরাগ জন্মাইয়া দিয়া ইহার অভ্যন্তরস্থিত ভাল জিনিষটুকু দেখিবার পথ রুদ্ধ করিয়া দেওয়া আমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক বলিয়া বোধ হয় না।

সেবক
শ্রীনবীনকিশোর শর্ম্মণঃ।

(৫)

 তোমার চিঠি পড়িয়া বড় খুসী হইলাম। বাস্তবিক, বাঙালীজাতি যেরূপ চালাকী করিতে শিখিয়াছে, তাহাতে তাহাদের কাছে কোনো গম্ভীর বিষয় বলিতে বা কোনো শ্রদ্ধাস্পদের নাম করিতে মনের মধ্যে সঙ্কোচ উপস্থিত হয়। আমাদের এককালে গৌরবের দিন ছিল, আমাদের দেশে এককালে বড় বড় বীরসকল জন্মিয়াছিলেন— কিন্তু বাঙালীর কাছে ইহার কোনো ফল হইল না। তাহারা কেবল ভীষ্ম দ্রোণ ভীমার্জ্জুনকে পুরাতত্ত্বের কুলুঙ্গি হইতে পাড়িয়া ধূলা ঝাড়িয়া সভাস্থনে পুতুলনাচ দেখায়। আসল কথা, ভীষ্ম প্রভৃতি বীরগণ আমাদের দেশে মরিয়া গিয়াছেন। তাঁহারা যে বাতাসে ছিলেন, সে-বাতাস এখন আর নাই। স্মৃতিতে বাঁচিতে হইলেও তাহার খোরাক চাই। নাম মনে করিয়া রাখা ত স্মৃতি নহে, প্রাণ ধরিয়া রাখাই স্মৃতি।