পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
সমালোচনা

সূক্ষ্ম স্পর্শকাতর ভাবগুলি বিদেশী ভাষার গোলেমালে একেবারে চুপ করিয়া যায়, বিদেশী ভাষার জটিলতার মধ্যে আপনাদের হারাইয়া ফেলে। তখন আমরা ভাষাই শুনিতে পাই, উপমাই শুনিতে পাই, সে সুকুমার ভাবগুলির প্রাণ-ছোঁওয়া কথা আর শুনিতে পাই না। এমন মানুষ তো সচরাচর দেখিতে পাওয়া যায় যাহাদের দেখিলে মনে হয়– মানুষটা পোষাক পরে নাই, পোষাকটাই মানুষ পরিয়া বসিয়াছে। পোষাককে এমনি সে সমীহ করিয়া চলে যে, তাহাকে দেখিলে মনে হয়, আপনাকে সে পোষাক ঝুলাইয়া রাখিবার আল্‌না মাত্র মনে করে, পোষাকের দামেই তাহার দাম। আমার তো বোধ হয়, অনেক স্ত্রীলোকের অলঙ্কার ঘোমটার চেয়ে অধিক কাজ করে, তাহার হীরার সিঁথিটার দিকে লোকে এতক্ষণ চাহিয়া থাকে যে তাহার মুখ দেখিবার আর অবসর থাকে না। কবিতারও সেই দশা আমরা প্রায় মাঝে মাঝে দেখিতে পাই। বিদ্যাপতির সহিত চণ্ডিদাসের তুলনা করিলেই টের পাওয়া যাইবে যে, বিদ্যাপতি অপেক্ষা চণ্ডিদাস কত সহজে সরল ভাব প্রকাশ করিয়াছেন। আবার বিদ্যাপতির সহিত বসন্তরায়ের তুলনা করিলেও দেখা যায়, বিদ্যাপতির অপেক্ষা বসন্ত-রায়ের ভাষা ও ভাব কত সরল। বসন্তরায়ের কবিতায় প্রায় কোনখানেই টানাবোনা তুলনা নাই, তাহার মধ্যে কেবল সহজ কথার যাদুগিরি আছে। যাদুগিরি নহে তো কি? কিছুই বুঝিতে পারি না, এ গান শুনিয়া প্রাণের মধ্যে কেন এমন মোহ উপস্থিত হইল,– কথাগুলিও তো খুব পরিষ্কার, ভাবগুলিও তো খুব সোজা, তবে উহার মধ্যে এমন কি আছে যাহাতে আমার প্রাণে এতটা আনন্দ, এতটা সৌন্দর্য আনিয়া দেয়? এইখানে