পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বসন্তরায়।
১১৯

পরবোধ দেই এ রায়-বসন্ত,
তিলেক থির নাহি বাঁধি॥

 ইহার প্রথম দুটি ছত্রে ভাবের অধীরতা, ভাষার বাঁধ ভাঙ্গিবার জন্য ভাবের আবেগ কী চমৎকার প্রকাশ পাইতেছে! “প্রাণনাথ কেমন করিব আমি!” ইহাতে কতখানি আকুলতা প্রকাশ পাইতেছে! আমার প্রাণ তোমাকে লইয়া কি-যে করিতে চায় কিছু বুঝিতে পারি না। এত দেখিলাম, এত পাইলাম, তবুও প্রাণ আজও বলিতেছে “প্রাণনাথ কেমন করিব আমি!” বিদ্যাপতি বলিয়াছেন,

“লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখনু
           তবু হিয়ে জুড়ন না গেল!”

 বিদ্যাপতি সমস্ত কবিতাটিতে যাহা বলিয়াছেন, ইহার এক কথায় তাহার সমস্তটা বলা হইয়াছে এবং তাহা অপেক্ষা শতগুণ অধীরতা ইহাতে ব্যক্ত হইতেছে। “প্রাণনাথ কেমন করিব আমি! “দ্বিতীয় ছত্রে রাধা শ্যামের মুখের দিকে আকুল নেত্রে চাহিয়া কহিতেছেন “কে জানে কেমন তুমি! “যাহার এক তিল ঊর্ধ্বে উঠিলেই ভাষা মরিয়া যায়, সেই ভাষায় শেষ সীমায় দাঁড়াইয়া রাধা বলিতেছেন “কে জানে কেমন তুমি!”

 আর এক স্থলে রাধা বলিতেছেন–

ওহে নাথ, কিছুই না জানি,
তোমাতে মগন মন দিবস রজনী।
জাগিতে ঘুমিতে চিতে তোমাকেই দেখি,
পরাণপুতলী তুমি জীবনের সখি!