পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাউলের গান
১২৫

 আমাদের ভাব, আমাদের ভাষা আমরা যদি আয়ত্ত করিতে চাই, তবে বাঙ্গালী যেখানে হৃদয়ের কথা বলিয়াছে, সেইখানে সন্ধান করিতে হয়।

 যাঁহাদের প্রাণ বিদেশী হইয়া গিয়াছে, তাঁহারা কথায় কথায় বলেন– ভাব সর্ব্বত্রই সমান। জাতিবিশেষের বিশেষ সম্পত্তি কিছুই নাই! কথাটা শুনিতে বেশ উদার, প্রশস্ত। কিন্তু আমাদের মনে একটি সন্দেহ আছে। আমাদের মনে হয়, যাহার নিজের কিছু নাই, সে পরের স্বত্ব লোপ করিতে চায়। উপরে যে মতটি প্রকাশিত হইল, তাহা চৌর্য্যবৃত্তির একটি সুশ্রাব্য ছুতা বলিয়া বোধ হয়। যাঁহারা ইংরাজি হইতে দুই হাতে লুট করিতে থাকেন, বাঙ্গালাটাকে এমন করিয়া তোলেন যাহাতে তাহাকে আর ঘরের লোক বলিয়া মনে হয় না, তাহারাই বলেন ভাষাবিশেষের নিজস্ব কিছুই নাই, তাঁহারাই অম্লান বদনে পরের সোনা কানে দিয়া বেড়ান। আমারই যে নিজের সোনা আছে এমন নয়, কিন্তু তাই বলিয়া একটা মতের দোহাই দিয়া সোনাটাকে নিজের বলিয়া জাঁক করিয়া বেড়াই না। ভিক্ষা করিয়া থাকি, তাতেই মনে মনে ধিক্কার জন্মে, কিন্তু অমন করিলে যে স্পষ্ট চুরি করা হয়।

 সাম্য এবং বৈষম্য, দুটাকেই হিসাবের মধ্যে আনা চাই। বৈষম্য না থাকিলে জগৎ টিকিতেই পারে না। সব মানুষ সমান বটে, অথচ সব মানুষ আলাদা। দুটো মানুষ ঠিক এক ছাঁচের, এক ভাবের পাওয়া অসমম্ভব, ইহা কেহ অস্বীকার করিতে পারেন না। তেমনি দুইটি স্বতন্ত্র জাতির মধ্যে মনুষ্যস্বভাবের সাম্যও আছে,