পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমস্যা।
১৪৩

ঘটিতেছে, তাহার কারণ অভিভাবকদের এ বিষয়ে মতের স্থৈর্য্য নাই, একটা হিজিবিজি কাণ্ড হইতেছে। অন্তঃপুর হইতে স্ত্রীলোকদিগকে বাহিরে আনা তাঁহাদের মতও নয়, অথচ আনিতেও হইবে– এই জন্য অত্যন্ত অশোভনভাবে কার্য্য নির্ব্বাহ করা হয়। গৃহের স্ত্রীলোকদিগকে সর্ব্বজনসমক্ষে এরূপ ভাবে বাহির করিলে তাঁহাদের অপমান করা হয়। আত্বীয়স্বজন ও প্রতিবাসীদের উপহাস বিদ্রূপ উপেক্ষা করিয়া পুরস্ত্রীদিগকে যদি ভদ্রবেশ পরান অভ্যাস করাও, তবে তাঁহাদিগকে বাহিরে আনিতে পার– নতুবা উচক্কা মত বা উপস্থিত সুবিধার খাতিরে এরূপ ভদ্রজননিন্দনীয় ভাবে স্ত্রীলোকদিগকে বাহিরে আনিলে সমস্ত ভদ্র বঙ্গসমাজকে বিষম লজ্জায় ফেলা হয়।

 এক দল লোক আছেন তাঁহারা আধাআধি রকম সমাজসংস্কার করিতে চান। “এক - চোখো সংস্কার” নামক প্রবন্ধে তাঁহাদের সংস্কারকার্য্যের বিষয়ে বিস্তারিত করিয়া লিখিয়াছি। স্বামীর মৃত্যুর পরে পুনরায় বিবাহ করিলে পবিত্র দাম্পত্য ধর্ম্মের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়, এ বিষয়ে অনেকের সংশয় নাই। কিন্তু পৃথিবীর সুখ হইতে বিধবাদিগকে বঞ্চিত করা তাঁহারা নিষ্ঠুরতা জ্ঞান করেন। কিন্তু একটু ভাবিয়া দেখিলেই দেখা যায় বিধবাদিগকে পৃথিবীর সুখে মগ্ন করিয়া রাখাই প্রকৃত নিষ্ঠুরতা। অতএব একটাকে ছাড়িয়া আর-একটা রাখিতে গেলে, ঘাড়কে ছাঁটিয়া মাথা রাখিতে গেলে, বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হয়। একটি উদাহরণ দিলাম, কিন্তু এমন অনেক বিষয়েই প্রাচীন সমাজনিয়মের সহিত রফা করিয়া নূতন বন্দোবস্ত করিতে গিয়া সমাজের নানা দিকে জটিলতা আরও বাড়িয়া উঠিতেছে।