পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
তার্কিক
১১

 এই সকল ন্যাযশাস্ত্রবিদেরা রসিকতার কৈফিয়ৎ চাহেন, বিদ্রুপ করিয়া একটা অসঙ্গত সঙ্গত কথা কহিলে তর্কের দ্বারায় তাহার অযৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করাইয়া দেন, কথায় কথায় যদি একটা ঐতিহাসিক Fact-এর উল্লেখ করি, সেটা আর সকল বিষয়ে যেমনই সঙ্গত হউক না কেন, তাহার তারিখের একটু ইতস্তত, হইলে তৎক্ষণাৎ তাহার পাঁঁচ Volume ইতিহাসের চাপে সেটাকে ছারপোকার মত মারিয়া ফেলেন, মুখে যদি একটা কিছুর সহিত কিছুর তুলনা করি, অমনি তিনি ফিতা হাতে করিয়া অত্যন্ত পরিশ্রমে তাহার মাপ জোক করি আরম্ভ করেন, আমি বলিলাম, অমুক লোকটা নিতান্ত গাধার মত, তিনি অমনি বলিলেন, সে কেমন কথা, তাহার ত চারটে পা নাই, আর তাহার কান দুটা কিছু নিতান্তই বড় নয়, তাহার গলার আওয়াজ ভাল নহে বটে, কিন্তু তাই বলিয়া কি গাধার সঙ্গে তাহার তুলনা হয়? আমি বলিলাম হে বুদ্ধিমান, গাধার বুদ্ধির সহিত আমি তাহলে বুদ্ধির তুলনা করিতেছিলাম, আর কোন বিষয়ে সাদৃশ্য আছে বলিয়া মনে হয় নাই। তিনি অমনি বলিলেন, তাহাও কি ঠিক মেনে? পণ্ড বস্তুই দেখিতে পার, কিন্তু বাস্তুব বস্তুত্ত্ব কি সে মনে করিতে পারে? সে শ্বেতবর্ণ পদার্থ মনে আনিতেও পারে, কিন্তু শ্বেতবর্ণ নামক পদার্থ অতিরিক্ত একটা ভাবমাত্র সে কি মনে ধারণা করিতে পারে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি কাতর হইয়া বলিলাম, দোহাই মাপ কর, আমার অপরাধ হইয়াছে, এবার হইতে গাধার সহিত তাহার বুদ্ধির তুলনা না দিয়া তোমার সহিত দিব। শুনিয়া তিনি সন্তুষ্ট হইলেন।