পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমালোচনা।
১৫০

এক দল লোক আছেন, তাঁহারা পরিবর্ত্তন মাত্রেরই বিরোধী নহেন। তাঁহারা আংশিক পরিবর্ত্তন করিতে চাহেন। তাঁহাদের বিষয় লেখাই বর্ত্তমান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। তাঁহারা বলেন, বিধবা-বিবাহে আমাদের মত নাই; তবে, সংস্কার করিতে হয় ত বিধবাদের অবস্থা সংস্কার কর। তাহাদের উপবাস করিতে না হয়, তাহাদের মৎস্য মাংস খাইতে নিষেধ না থাকে, বেশবিন্যাস বিষয়ে তাহাদের ইচ্ছাকে অন্যায় বাধা না দেওয়া হয়। এক কথায়, বিধবাদের প্রতি সমাজের যত প্রকার অত্যাচার আছে তাহা দূর হউক, কিন্তু তাহাই বলিয়া বিধবারা সধবা হইতে পারিবে না। তাঁহারা বলিবেন,– “অসবর্ণ বিবাহ! কি সর্ব্বনাশ! কিন্তু অনুরাগমূলক বিবাহে আমাদের আপত্তি নাই। পিতামাতাদের দ্বারা বধূ নির্ব্বাচিত না হইয়া প্রণয়াকৃষ্ট বিবাহেচ্ছুক যদি স্বয়ং আপনার উপযোগী পাত্রী স্থির করে ত ভাল হয়। কিন্তু অসবর্ণ বিবাহ নৈব নৈবচ।” তাঁহারা পুত্রের বয়স অধিক না হইলে বিবাহ দিতে অনুমতি করেন না, কিন্তু কন্যাকে অল্প বয়সে বিবাহ দেন। তাঁহারা স্ত্রীশিক্ষার আবশ্যকতা বুঝিয়াছেন কিন্তু স্ত্রী-স্বাধীনতাকে ডরান। লোকাচারবিশেষের উপর তাঁহাদের বিরাগ নাই, তাহার আনুষঙ্গিক দুই একটা অনুষ্ঠানের প্রতি তাঁহাদের আক্রোশ। তাঁহারা বুঝেন না যে, সেই অনুষ্ঠানগুলি সেই লোকাচারের স্তম্ভ। তাঁহারা যাহা বলেন তাহার মর্ম্ম এই – “সমস্ত বৃক্ষটির উপর আমাদের বিদ্বেষ নাই; কিন্তু উহার কতকগুলা জটিল শিকড় যত অনর্থের মূল। আমরা শুদ্ধ কেবল ঐ শিকড়গুলা ছেদন করিব। আহা, গাছটি বাঁচিয়া থাক্‌!″