পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
সমালোচনা।

অসীমের উপর সত্য দাঁড়াইয়া আছে, আমারই উপর নহে, তোমারই উপর নহে, অবস্থাবিশেষের উপর নহে— সেই সত্যকে সীমার উপর দাঁড় করাইলে তাহার প্রতিষ্ঠাভূমি ভাঙ্গিয়া যায়— তখন বিসর্জ্জিত দেব-প্রতিমার তৃণকাষ্ঠের ন্যায় তাহাকে লইয়া যে-সে যথেচ্ছ টানা-ছেঁড়া করিতে পারে। সত্য যেমন, অন্যান্য ধর্ম্মনীতিও তেমনি। যদি বিবেচনা কর পরার্থপরতা আবশ্যক, এই জন্যই তাহা শ্রদ্ধেয়— যদি মনে কর, আজ আমি অপরের সাহায্য করিলে কাল সে আমার সাহায্য করিবে, এই জন্যই পরের সাহায্য করিব— তবে কখনই পরের ভাল-রূপ সাহায্য করিতে পার না ও সেই পরার্থপরতার প্রবৃত্তি কখনই অধিক দিন টিঁকিবে না। কিসের বলেই বা টিঁকিবে! হিমালয়ের বিশাল হৃদয় হইতে উচ্ছ্বসিত হইতেছে বলিয়াই গঙ্গা এত দিন অবিচ্ছেদে আছে, এত দূর অবাধে গিয়াছে, তাই সে এত গভীর, এত প্রশস্ত; আর এই গঙ্গা যদি আমাদের পরম সুবিধাজনক কলের পাইপ হইতে বাহির হইত তবে তাহা হইতে বড় জোর কলিকাতা সহরের ধূলাগুলা কাদা হইয়া উঠিত, আর কিছু হইত না। গঙ্গার জলের হিসাব রাখিতে হয় না; কেহ যদি গ্রীষ্মকালে দুই কলসী অধিক তোলে বা দুই অঞ্জলি অধিক পান করে তবে টানাটানি পড়ে না– আর কেবলমাত্র কল হইতে যে জল বাহির হয় একটু খরচের বাড়াবাড়ি পড়িলেই ঠিক আবশ্যকের সময় সে তিরোহিত হইয়া যায়। যে সময়ে তৃষা প্রবল, রৌদ্র প্রখর, ধরণী শুষ্ক, যে সময়ে শীতল জলের আবশ্যক সর্ব্বাপেক্ষা অধিক, সেই সময়েই সে নলের মধ্যে তাতিয়া উঠে, কলের মধ্যে ফুরাইয়া যায়।

 বৃহৎ নিয়মে ক্ষুদ্র কাজ অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু সেই নিয়ম যদি বৃহৎ না হইত তবে তাহার দ্বারা ক্ষুদ্র কাজটুকুও অনুষ্ঠিত হইতে