পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একটি পুরাতন কথা
১৬৩

উত্তাপ যাইবে, আলোক যাইবে, পশু পক্ষী কীট পতঙ্গ সবাই মিলিয়া সরিয়া পড়িবে। তেমনি কেবলমাত্র Political উদ্দেশ্যেই সত্য বদ্ধ নহে। তাহার প্রভাব মনুষ্যসমাজের অস্থি মজ্জার মধ্যে সহস্র আকারে কার্য্য করিতেছে– একটি মাত্র উদ্দেশ্যবিশেষের উপযোগী করিয়া যদি তাহার পরিবর্ত্তন কর, তবে সে আর আর শত সহস্র উদ্দেশ্যের পক্ষে অনুপযোগী হইয়া উঠিবে। যেখানে যত সমাজের ধ্বংস হইয়াছে এইরূপ করিয়াই হইয়াছে। যখনই মতিভ্রমবশতঃ একটি সঙ্কীর্ণ হিত সমাজের চক্ষে সর্ব্বেসর্ব্বা হইয়া উঠিয়াছে, এবং অনন্ত হিতকে সে তাহার নিকটে বলিদান দিয়াছে, তখনই সেই সমাজের মধ্যে শনি প্রবেশ করিয়াছে, তাহার কলি ঘনাইয়া আসিয়াছে। একটি বস্তা সর্ষপের সদগতি করিতে গিয়া ভরা নৌকা ডুবাইলে বাণিজ্যের যেরূপ উন্নতি হয় উপরি-উক্ত সমাজের সেইরূপ উন্নতি হইয়া থাকে। অতএব স্বজাতির যথার্থ উন্নতি যদি প্রার্থনীয় হয়, তবে কল কৌশল ধূর্ত্ততা চাণক্যতা পরিহার করিয়া যথার্থ পুরুষের মত, মানুষের মত, মহত্ত্বের সরল রাজপথে চলিতে হইবে; তাহাতে গম্যস্থানে পৌঁছিতে যদি বিলম্ব হয় তাহাও শ্রেয়, তথাপি সুরঙ্গপথে অতি সত্বরে রসাতলরাজ্যে গিয়া উপনিবেশ স্থাপন করা সর্ব্বথা পরিহর্ত্তব্য।

 পাপের পথে ধ্বংসের পথে যে বড় বড় দেউড়ি আছে সেখানে সমাজের প্রহরীরা বসিয়া থাকে, সুতরাং সে দিক দিয়া প্রবেশ করিতে হইলে বিস্তর বাধা পাইতে হয়; কিন্তু ছোট খিড়্‌কির দুয়ারগুলিই ভয়ানক, সে দিকে তেমন কড়াক্কড় পাহারা নাই। অতএব, বাহির হইতে দেখিতে যেমনই হউক, ধ্বংসের সেই পথগুলিই প্রশস্ত।