পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিজ্ঞতা
২১

প্রাণে বাঁকা কটাক্ষপাত করিয়া তাহার চোখ দিয়া জল তাহার বুক দিয়া রক্ত বাহির করিয়া দেন। সর্পজাতি বোধ করি বড় বুদ্ধিমান হইবে, নহিলে তাহারা বাঁকিয়া চলে কেন? হে বিজ্ঞগণ, তোমরাও খুব বুদ্ধিমান, কিন্তু একটা বিষয় তোমাদের জানা নাই – পৃথিবীতে সিধা জিনিষও অনেক আছে। তোমাদের প্রাণের বাঁকা আর্শিতে যে একটা বাঁকা ছায়া দেখিতেছ, জগতের চেহারাখানা নিতান্তই অমনতর না। হায় হায়! জন্মেজয় যখন সর্পসত্র করিয়াছিলেন তখন কি গোটাকতক ঢোঁড়া সাপই মরিয়াছিল, তোমাদের মত বিষাক্ত বুদ্ধিমান সাপগুলা ছিল কোথায়?

 তুমি সৎকার্য করিতেছ বলিয়া বিজ্ঞ লোকেরাও যে তাহাকে সৎ মনে করিবে, এ কি করিয়া আশা করা যায়? তাহা হইলে বিধাতা তাহাদিগকে বিজ্ঞ করিয়াই গড়িলেন কেন? বসন্ত আসিয়াছে বলিয়া কি কাক মিঠা ডাকিবে? তাহা হইলে বিধাতা তাহাকে কাক করিলেন কেন? সে যে বুদ্ধিমান পক্ষী! যখন কোকিল ডাকিতে থাকে, ফুল ফুটিয়া উঠে, বাতাস প্রাণ খুলিয়া দেয়, তখন সে শাখায় বসিয়া বুদ্ধিপূর্ণ ক্ষুদ্র চক্ষু মিটমিট করিতে থাকে, অবিশ্বাসের সহিত চারি দিকে চাহিয়া দেখে ও বেসুরে ডাকিয়া উঠে কা। বসন্তের সহিত তাহার সুর মেলে না বলিয়া সে কি চুপ করিয়া থাকিবে? সে যে বুদ্ধিমান জীব! সে বলে, বসন্তের সুর বেসুরা বলিতেছে! যখন কোকিল ডাকে অমনি সে ঘাড় নাড়িয়া বলে কা– যখন ফুল ফুটে অমনি সে ঘাড় নাড়িয়া বলে কা– অর্থাৎ কিছুতেই সে সায় দিতে পারে না; সে বলে যে, আগাগোড়া সুর মিলিতেছে না! শুনা গেছে,