পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬
সমালোচনা

তোমরা সিংহাসনস্থ বড় বড় রাজা মহারাজার চেয়ে নিজেকে উঁচু মনে করিতেছ–তাহার কারণ, তোমাদের আত্মম্ভরিতা- নামক লাঙ্গুলের প্রসরটা অত্যন্ত অধিক-নিজ-রচিত কুণ্ডলিত লাঙ্গুল-সিংহাসনের উপর বসিয়া দূরবীক্ষণের উল্টা দিক দিয়া জগৎসংসারকে দেখিতেছ। তোমাদের শরীরের আয়তন অধিক নহে, কিন্তু লেজ হইতে মাপিলে অনেকটা হয়। বিজ্ঞতার হৃদয় যদি এতটা প্রশস্ত হয় যে পরকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিলে তাহার বক্ষে স্থান কুলায়, কুঞ্চিতচর্ম্ম সংশয়ের নাম যদি বিজ্ঞতা না হয়, তবে সেই বিজ্ঞতা উপার্জ্জনের জন্য চেষ্টা করিব। তোমাদের বিজ্ঞতায় যে সূর্য্যের আলো নাই, বসন্তকাননের শ্যামল বর্ণ নাই। তোমাদের বিজ্ঞতা সমুদয় জগৎকে অবিশ্বাস করিয়া অবশেষে একটি দুই-হাত-পরিমাণ ডোবার মধ্যে নিজেকে বদ্ধ করিয়াছে ও আপনাকে সমুদ্রের চেয়ে গভীর মনে করিতেছে, চন্দ্র সূর্য্যের হাসিকে চপলতা জ্ঞান করিতেছে, অনবরত পচিয়া উঠিতেছে ও মুখটা আঁধার করিয়া সুগম্ভীর চেহারা বাহির করিতেছে। তোমাদের বিজ্ঞতার প্রাণটা একরত্তি, তাহাকে ছুঁইলেই কচ্ছপের মত সে নিজের পেটের মধ্যে প্রবেশ করে; তোমাদের বিজ্ঞতার হাসিতে কৃপণতা, তাহার ভাষায় দুর্ভিক্ষ, তাহার আলিঙ্গন কাঁকড়ার আলিঙ্গনের মত, জিনিষ কিনিয়া সে কাণাকড়ি দিয়া তাহার দাম শোধ করে! এ বিজ্ঞতা লইয়া তোমরাই গর্ব্ব কর।

 যে বিজ্ঞ সদনুষ্ঠানকে উপহাস করে, তাহা অপেক্ষা যে সরল ব্যক্তি সদনুষ্ঠানে চেষ্টা করিয়া অকৃতকার্য হইয়াছে সে মহৎ; যে মশক হস্তীকে বিব্রত করিয়া তোলে সে মশক হস্তীর চেয়ে বড়ো নহে– যে